যদিও বছরের অন্য সময় এদের বিরুদ্ধে দর্শনার্থীদের বিরক্ত করার অভিযোগ থাকে। কিন্তু উৎসবের দিনগুলোতে সবাই তাদের কাছ থেকেই ফুল কেনেন।
উৎসবের দিনগুলোতে এসব এলাকায় আসা দর্শনার্থীদের কেনা ফুলে সৌন্দর্য বাড়ে উৎসবমুখর পরিবেশের। কিন্তু যাদের বিক্রি করা ফুলে সৌন্দর্য বাড়ে তাদের জীবন কিন্তু ফুলের মতো সুন্দর নয়। সারাক্ষণ অভাব তাদের তাড়া করে বেড়ায়। তবে বিভিন্ন উৎসবে এদের ব্যস্ততা একটু বেশিই থাকে। আর মুখে থাকে হাসি।
রাজধানীর ফকিরাপুলের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কথা হয়। মেলায় এসেছেন স্ত্রী ও চার বছরের কন্যা লামিয়াকে নিয়ে। ১২/১৪ বছরের ফয়সালকে ফুলের রিং নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুটি ফুলের রিং কিনে স্ত্রী এবং মেয়ের মাথায় দিয়ে দেন।
রবিউল বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় অনেককেই দেখলাম মাথায় ফুলের রিং পরে ঘুরছেন। দেখতে ভালোই লাগছে। তাই স্ত্রী ও মেয়ের জন্য দুটি কিনলাম।
ফুলের রিং বিক্রেতা ফয়সালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার মা-বাবা মেলার পাশে বসে ফুলের রিং তৈরি করছেন। শুধু তার মা-বাবা নন ফুলের রিং তৈরি করছেন আরও অনেকেই।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বটতলা, হাকিম চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে সৌন্দর্য বর্ধনের এসব কারিগরদের দেখা যায়। যারা সবাই ব্যস্ত যার যার কাজে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বটতলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ফুলের রিং বানাচ্ছেন রাব্বী ও নাসরিন দম্পতি। কথা বলতে গেলে রাব্বী বাংলানিউজকে বলেন, ‘যা কইবেন তাড়াতাড়ি কন, টাইম কম। কথা কইলে কাম করুম কখন’
পাশ থেকে তার স্ত্রী নাসরিন বলেন, ‘আমাদের বাসা কামরঙ্গীর চর। আমি টিএসসি, রমনা উদ্যানে সারাবছর ফুল বেঁচি। আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন ধরেন বসন্ত, পয়েলা বৈশাখ, ১৬ ডিসেম্বর, ভালোবাসা দিবস, বইমেলায় আমরা ফুলের রিং বানাইয়া বেঁচি’।
নাসরিন আরও বলেন, তার স্বামী সারাবছর ডাব বিক্রি করেন। বইমেলায় কাজের চাপ বেশি থাকায়, ডাব বিক্রি বাদ দিয়ে এখন তাকে ফুল বিক্রিতে সাহায্য করছেন।
পুঁজি কম থাকায় শাহবাগ থেকে ফুল কিনে তারা রিংগুলো তৈরি করেন। অন্য সময়ের চেয়ে এখন তাদের কাজের ব্যস্ততা বেশি বলেও জানান নাসরিন।
নাসরিন বলেন, ‘অন্য সময় আমরা মানুষের কাছে দিয়ে ফুল বিক্রি করি। আজ অনেকে ডেকে নিয়ে কিনে। ’ মানুষে রিংগুলো মাথায় দিয়ে মজা করে। আর আমরা এগুলো বিক্রি করে সার চালাই’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরের পাশে বসে ফুলের রিং বানাচ্ছেন আলমগীর হোসেন দম্পতি। আলমগীর সারাবছর রিকশা চালান। এখন স্ত্রী আফরোজার ব্যস্ততা বেশি দেখে তাকে সহযোগিতা করছেন।
পাশ থেকে ঝর্ণা নামে আরেক ফুল বিক্রেতা বলেন, ‘ভাই আমরা কম দামে ফুল বিক্রি করি। তেমন লাভ নেই। তারপরও পুলিশ দেখলে আমাগো বইতে দেয় না। ’
ঝর্ণা আরো বলেন, ‘আমরা দুই-তিন হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে এই ব্যবসা করি। আমরা না থাকলে কাদের কাছে ফুলের রিং পাইতো মানুষ?’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
এমএইচকে/আরআর/বিএস