বকুলতলার মঞ্চ ঘিরে বসন্তের হলুদ কোকিলরা। তাদের পরনে হলুদ শাড়ি, খোঁপায় হলুদ ও সাদা ফুলের মালা, মাথায় ফুলের রিং, কপালে হলুদ টিপ, হাত ভর্তি রেশমী চুড়ি।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিনে বাসন্তী রঙে সেজেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা। বসন্তকে বরণ করতে সকাল থেকেই সেখানে আগমন ঘটে রাজধানীর নানা বয়সী মেয়েদের। তাদের সাথে বাসন্তী সাজে সেজেছিলো পুরুষরাও। সেই সাথে ছিলো শিশুদের পোশাকে ফাল্গুনী রঙের বাহার।
২২ বছর আগে ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক, লেখক-সাংবাদিক প্রয়াত ওয়াহিদুল হক বসন্ত উৎসবের সূচনা করেছিলেন। সেই ধরাবাহিকতায় আজ পহেলা ফাগুন বসন্ত উৎসবে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় বসন্ত উৎসব পরিষদের উদ্যোগে ফি বারের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হলো ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে-১৪২৩।
উৎসবকে পরিপূর্ণ করতে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে শুরু হয় বসন্তবরণ অনুষ্ঠান। শুরুতেই ছিলো ধ্রুপদী যন্ত্রসঙ্গীত। সারেঙ্গীতে ছিলেন মতিয়ার রহমান। এরপর ধ্রুপদী কণ্ঠসঙ্গীত নিয়ে আসেন অসিত রায়। পরে বসন্তের কবিতা পাঠ করেন হাসান ঈমাম।
বসন্ত উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছেন শিমলা ওয়াহিদ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবারই বসন্তের সকালটা বকুলতলায় কাটানোর চেষ্টা করি। বসন্তের প্রথম সকালে ফাল্গুনী হাওয়া সেটাও যদি হয় বকুলতলা। সব মিলয়ে অসাধারণ একটা মুহুর্ত কাটে।
বাসন্তী রঙের শাড়িতে সেজেছেন সঞ্চিতা। ‘আজকের দিনটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বসন্ত। এই উপলক্ষে সুন্দর আয়োজন হয় এখানে। বসন্তবরণে এই উৎসবমুখর পরিবেশকে মিস করতে চায়? বলেন তিনি।
তবে, মেয়েদের তুলনায় কম যান না পুরুষরাও। হলুদ পাঞ্জাবিতে তারাও সেজেছে বাসন্তী সাজে। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে বলে জানালেন সিহাব হোসাইন।
বসন্তের উৎসবে আরও কিছু পরিবর্তনের বিষয়টিও উল্লেখ করলেন কেউ কেউ। তেজগাঁও থেকে আসা রুপক বললেন, গতবছরও আমি এসেছি। সবকিছু আগের মতোই মনে হচ্ছে। যেহেতু এটা প্রাণের উৎসব। তাই অনুষ্ঠানসূচিতে পরিবর্তন করে আরেকটু অন্যরকম করা যেত। আশা করছি, আগামী বছর থেকে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী উপভোগ করতে পারবো।
অনুষ্ঠান দেখতে এসেছেন জনপ্রিয় আবৃত্তিকার শিমুল মোস্তফা। বসন্তকে নতুনের দীপ্ত প্রতীক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বসন্ত আসার সাথে সাথে নতুন করে জাগি আমরা। তাই তো প্রাণের উৎসবে যোগ দিয়েছি। সুর আর ছন্দের মায়ায় নিজেকে নতুন করে ফিরে পাওয়ার নামই তো বসন্ত।
এমন অনুষ্ঠান বড় পরিসরে আয়োজন করার প্রয়াস ব্যক্ত করে আয়োজক পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, আগে তো আরও অল্প পরিসরে ছিলো। এখন বড় পরিসরে সবার মাঝে এ উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে। সামনে আরও বড় হবে এই আয়োজন।
বসন্তের এই ফাল্গুনে সাম্প্রদায়িকতা ভুলে প্রাণের মেলবন্ধনে সবাই মিলিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
জেডএফ/পিসি