একই সঙ্গে এ খাতের বড় বাধা হিসেবে তিনি ওষুধের উচ্চমূল্য ও মনোপলি ব্যবসাকে দায়ী করেন। একইসঙ্গে এ অবস্থা দূর করতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন বর্ষিয়ান এ অর্থনীতিবিদ।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘থার্ড সিপিডি এনিভার্সারি লেকচার’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান চলে দুপুর পর্যন্ত।
এতে ‘হেলথ অ্যান্ড গ্লোবাল ট্রেড রিজিম ইজ ইট এফেক্টিং ইকুয়াল একসেস টু মেডিসিন’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন আমেরিকার দ্যা নিউইয়র্ক স্কুলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিভাগের শিক্ষক এবং জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাকিকো ফুকুদা-পার।
অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান বলেন, দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো মনোপলি ব্যবসা করছে। বিনা কারণে তারা ওষুধের দাম বাড়িয়ে জনগণকে তা কিনতে বাধ্য করছে। জীবন রক্ষাকারী একটি ওষুধের উৎপাদন খরচ যদি এক ডলার হয়, তা সকল চেইন কমপ্লিট করে ক্রেতার হাতে যেতে হয়তো ৫ ডলার লাগে। কিন্তু ক্রেতাকে তা এক হাজার ডলারে কিনতে হচ্ছে। হাজারগুণে বিক্রি কোনোকালেই ব্যবসার সূত্র ছিল না।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য একটি স্পেশাল সেক্টর। কিন্তু বাংলাদেশে কোনোকালেই এ খাত গুরুত্ব পায়নি। কেউ এটা নিয়ে তেমন ভাবেনও নি। কিন্তু তারপরও দেশের ওষুধ উৎপাদন অবস্থা দেখতে গেলে ভালোই। দেশের কোম্পানিগুলো দিয়েই ওষুধের প্রায় সকল চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এখন উচিত জীবনদায়ী ওষুধ বা জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। একইসঙ্গে লেজিস্লেলেশন বা আইনের দিকে নজর দিতে হবে। কোম্পানিগুলো যাতে ইচ্ছাকৃতভাবে দাম নির্ধারণ করতে না পারে, সে দিকে নজর দিতে হবে।
রেহমান সোবহান বলেন, আর্ন্তজাতিক কিছু চুক্তি আছে, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ওষুধ উৎপাদন ও ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এদিকে নজর দিতে হবে। আবার অনেক অসুখ আছে যা সামান্য কিছু ওষুধ নিয়মিত খেলেই চিরতরে সেরে যায়। অনেক ক্ষেত্রে সেসব ওষুধ ব্যবহার করতে না পারলে রোগ জটিল হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, এই অবস্থা কাটাতে তিনটা জিনিস জরুরি দরকার। তা হলো নতুন গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, ওষুধের উচ্চমূল্য রোধ ও মনোপলি ব্যবসা বন্ধে আইন প্রণয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার মূল কেন্দ্র করা।
অধ্যাপক সাকিকো ফুকুদা-পার তার বক্তব্যে বলেন, ডেভেলপমেন্ট দেশগুলোতে কিছু কমন রোগ আছে, যার জন্য নিয়মিত চিকিৎসা ও সাধারণ ওষুধই ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু আর্ন্তজাতিক বিধিনিষেধ ও সরকারের অবহেলার কারণে মানুষকে এসব রোধে অধিক কষ্ট পেতে হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে- তাতে কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এমডিজি’র তিন নম্বর গোল পূরণে বাধা হিসেবে। যে বিষয়গুলোতে নজর দিলে এসব সমস্যার সমাধান হবে তা হলো- ভলেন্টারি ডোনেশন, ওষুধের উচ্চমূল্য, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ তৈরি, প্রাইভেটে পাবলিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, সরকারি তহবিল গঠন, সহযোগী সংস্থা বা দাতব্য সংস্থার কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ ও ধনী রোগীদের কাছ থেকে দরিদ্রদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।
অনুষ্ঠানে ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের ফার্মাসিটিক্যাল সেক্টর অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা আমাদের দেশের চাহিদার প্রায় ৯৮ ভাগ ওষুধ নিজেদের ওষুধ দিয়েই পূরণ করি। এছাড়া আমাদের ওষুধের মান উন্নত হওয়ায় বিশ্বের ১২৭টি দেশে আমরা ওষুধ রফতানি করছি। গত অর্থ বছরে আমরা ১৪০ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ রফতানি করেছি। যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৬০ মিলিয়ন ডলার বেশি। সরকার হেলথ ট্যুরিজমকে আকৃষ্ট করতে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে কাজ করছে।
সরকারের নেওয়া প্রকল্প ও পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে এমডিজি গোল পূরণ সহজ হবে।
এদিকে, উন্নয়ন কর্মী ড. জাফরুল্লাহ বলেন, প্রাইস অব মেডিসিন, প্রাইস অব টেকনোলজি ও এবিলিটি অব মেডিসিন হলো স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে মূল অন্তরায়। যতক্ষণ না এই বিষয়গুলোর দিকে সরকারি নজর না পড়বে, ততদিন সমস্যার সমাধান হবে না।
অনুষ্ঠানে দেশের স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, ওষুধ উৎপাদক, চিকিৎসক, হাসপাতাল মালিক, উন্নয়নকর্মী, অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
আরএম/পিসি