ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

লবণ-পানিতে শ্যাম্পু আর স্পিরিট-পানিতে বডি স্প্রে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
 লবণ-পানিতে শ্যাম্পু আর স্পিরিট-পানিতে বডি স্প্রে! জেলাল পণ্য উৎপাদন, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নামি-দামী ব্র্যাণ্ডের শ্যাম্পু হেড এন্ড সোল্ডার, ডাভ কিংবা সানসিল্ক। বাস্তবে ব্র্যান্ড বা উপাদান ভিন্ন হলেও সকল শ্যাম্পুই তৈরি হচ্ছে লবণ-পানির সংমিশ্রণে, তাও আবার একই কারখানায়!

আবার ওই কারখানাতেই তৈরি হচ্ছে ফগ, এডিডাস, নেভিয়া, রেক্স, সেট ওয়েট, ফা, মেক্সি, ডু-ইট বা ব্লু ফর মেন ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে। ব্র্যান্ড ভেদে সেন্ট আলাদা ব্যবহার করলেও সবগুলো তৈরি হচ্ছে পানি আর স্পিরিটের সমন্বয়ে।

নতুন এই পদ্ধতিতে আধুনিক কোন যন্ত্র ছাড়াই এসব ভেজাল প্রসাধনী তৈরি করতে দেখা গেছে রাজধানীর বংশালের এক বাসায়। আর এসব প্রসাধনী কৌশলে এমনভাবে বোতলজাত করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে, দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটা আসল আর কোনটা নকল।

দোকানি ও উৎপাদনকারীর সমঝোতায় বিভিন্ন নামি-দামী মার্কেটেই ঠাঁই হচ্ছে এসব প্রসাধনীর। বেশি লাভের আশায় দোকানিরা সুযোগটা নিচ্ছেন, আর এতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন জনগণ।

বিভিন্ন ভেজাল পণ্য, ছবি: বাংলানিউজসম্প্রতি বংশালের নয়াবাজার এলাকায় ভেজাল প্রসাধনীর ৪টি কারখানা ও দুইটি গোডাউনে অভিযান চালায় ৠাব। ২৪, নয়াবাজার এর একটি বাড়ির ৬ষ্ঠ তলার এমন একটি কারখানায় শ্যাম্পু, বডি স্প্রে ছাড়াও তৈরি হচ্ছিল নামি-দামী ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে, লোশন ও ফেস ওয়াশ।

বাংলানিউজের সাথে আলাপকালে ওই কারখানার কারিগর জাহাঙ্গীর হোসেন বিভিন্ন প্রসাধনী বানানোর প্রক্রিয়াগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন।

ভেজাল পণ্য উৎপাদনের উপকরণ, ছবি: বাংলানিউজতিনি জানান, স্পিরিট ও পানির সাথে বিভিন্ন ব্র্যান্ড অনুযায়ী আলাদা আলাদা সেন্ট ব্যবহার করে বডি স্প্রে তৈরি করা হয়। তারপর সেগুলো সিরিঞ্জের মাধ্যমে পুরোনো বোতলে ভরা হয়। সাথে ভরা হয় লাইটারে ব্যবহৃত গ্যাস।

শ্যাম্পু তৈরিতে লবণ-পানির সাথে খানিকটা আসল শ্যাম্পু মেশানো হয়। তারপর ব্র্যান্ড ভেদে সেন্ট মিশিয়ে সিরিঞ্জ দিয়ে বোতলে ভরা হয়।

বড়ির মত একধরনের সাদা উপাদানের সাথে তেল মিশিয়ে জাল দিয়ে তৈরি হয় লোশনের উপাদান। তারপর এর সাথে বিভিন্ন সেন্ট মিশিয়ে বোতলে ভরা হয়। আর শ্যাম্পু, পানি ও রং মিশিয়ে তৈরি করা হয় ফেসওয়াশ।

সবশেষে বোতলের নিচে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বসানো, লেবেল ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা শেষে প্যাকেটজাত করা হয়। এরপরই একটি চক্রের মাধ্যমে এগুলো পৌঁছে যায় বিভিন্ন দোকানে।

তিনি আরো জানান, বিভিন্ন ভাঙ্গারির দোকান থেকে প্রসাধনীর খালি বোতলগুলো সংগ্রহ করেন তারা। প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত সেন্টসহ বিভিন্ন উপাদান চকবাজার থেকে ক্রয় করে আনেন। কোন বোতলের লেবেল ব্যবহার অনুপযোগী হলে চকবাজারে হুবহু একই রকম লেবেলও কিনতে পাওয়া যায়।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এসব পণ্য বাজারে বিক্রি হওয়ার মেইন কালপ্রিট দোকানদাররা। ভাল ভাল মার্কেটে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কারণ জনগণ মনে করে ভাল জায়গাতে ভাল জিনিস পাওয়া যায়।

ওই কারখানায় উৎপাদিত ব্র্যান্ডের মধ্যে হিমালয়া ও ডাভ ব্র্যান্ডের ফেস ওয়াশ, পন্ডস ও ডাভ লোশনও রয়েছে।

ভেজাল কারখানায় অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ৠাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এসব কারখানায় সম্পূর্ণ ম্যানুয়ালি বিভিন্ন বিখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি হচ্ছে। যার মাধ্যমে জনগণ মারাত্মকভাবে প্রতারিত হচ্ছে। এসব কারখানা থেকে ৪৩ ধরনের পণ্য জব্দ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
পিএম/আরআই

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।