ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ত্রি-মুখী উন্নয়নের চাপে স্থবির মৌচাক-মালিবাগ, দুর্ভোগ সীমাহীন

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
ত্রি-মুখী উন্নয়নের চাপে স্থবির মৌচাক-মালিবাগ, দুর্ভোগ সীমাহীন ত্রি-মুখী উন্নয়নের চাপে স্থবির মৌচাক-মালিবাগ, দুর্ভোগ সীমাহীন/ ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

ঢাকা: মৌচাকের ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে সিএনজিতে করে মালামাল নিয়ে বাড্ডা যাচ্ছিলেন শাওন। বহু কষ্টে মালিবাগ রেলগেটের কাছাকাছি যেতেই ভাঙ্গা রাস্তায় হাঁটু পানির মধ্যে আটকে যায় সিএনজি। অনেক চেষ্টার পরও সিএনজি চালু করতে পারলেন না চালক।

বাধ্য হয়ে পানিতে নেমে চালক, শাওন ও তার সঙ্গীকে ঠেলেঠুলে সিএনজিকে গর্ত থেকে টেনে তুলতে হলো। ওই সময় শাওন বিরক্তির স্বরে গজরাচ্ছিলেন: ‘'আল্লাই জানে রাস্তাটা কবে ভালো হবে।

  এ কষ্ট আর সহ্য হয় না। '’

এমন ঘটনা শুধু শাওনের নয়। এমন হাজারো ভোগান্তির ঘটনা মালিবাগ-মৌচাক সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা, ধুলোবালি, রাস্তাজুড়ে প্যাঁচপ্যাচে কাদা, পরিবহন সংকট--- সব মিলে এই সড়ক দিয়ে চলা যেন  এক নরকযাত্রা। ত্রি-মুখী উন্নয়নের চাপে স্থবির মৌচাক-মালিবাগ, দুর্ভোগ সীমাহীন/ ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

২০১৩ সালে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দফায় দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদই কেবল বেড়েছে আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খানা-খন্দ।   এখন আবার ‘গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো’ এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে আরেক ভোগান্তি। সেটি হচ্ছে, বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়হীন বিদ্যুতের লাইন সংস্কারের কাজ।

সরজমিনে দেখা গেল,বিদ্যুতের লাইন নিতে মালিবাগ থেকে মগবাজার পযর্ন্ত রাস্তার মাঝ বরাবর ৮ ফুটের মত  গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এ স্থানে প্রায় দেড় মাস ধরে চলছে এই খোঁড়াখুঁড়ি। প্রায় পনের দিন ধরে মালিবাগ থেকে মৌচাক সড়কের একাংশ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। একপাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় সড়কটিতে তীব্র যানজট মানুষকে ভোগাচ্ছে  আর কাঁদাচ্ছে।

তবে ফ্লাইওভারের কাজ বা বিদ্যুৎ বিভাগের কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়িতেই নিস্তার পায় নি মৌচাক-মালিবাগ সড়ক। তাদের খোঁড়াখুঁড়িতে যোগ দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও। দুই মাস ধরে সুয়ারেজ লাইনের উন্নয়ন করতে শুরু করেছে ডিএসসিসি। মালিবাগ-মৌচাকের সড়কটির দু’পাশে চলছে সুয়ারেজ লাইনের কাজ। রাজারবাগ পুলিশ লাইন পযর্ন্ত যাওয়া সিটি করপোরেশনের এ কাজ কবে শেষ হবে? সংশ্লিষ্টদের কেউ তা বলে পারছে না। ত্রি-মুখী উন্নয়নের চাপে স্থবির মৌচাক-মালিবাগ, দুর্ভোগ সীমাহীন/ ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

সড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের এই ত্রি-মূখী উন্নয়ন কাজে এই পথ দিয়ে যাতায়তকারী জনসাধারণকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এছাড়া মৌচাক মোড় ও মালিবাগের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অচলাবব্যস্থার কারণে বিপুল ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে সেকথাই জানালেন তারা।

মৌচাক মার্কেটের আকিব ফ্যাশনের কর্ণধার মো.আনোয়ারা হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘একটা সময় রাজধানীর শপিংয়ের জনপ্রিয় স্থান ছিলো মৌচাক। ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরুর পর থেকে ক্রেতার সংখ্যা কমতে থাকে। এখন বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রেতাও কমে এসে ঠেকেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। সারাদিন দোকানে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকি। এছাড়া আর তো কোনো উপায় নেই!’’

মৌচাক মোড়ের ফরচুন মার্কেটেরও চিত্র একই। পুরো শপিং সেন্টারে হাতে গোনা ক’জন বিক্রেতা ছাড়া তেমন কাউকে চোখেই পড়লো না। ত্রি-মুখী উন্নয়নের চাপে স্থবির মৌচাক-মালিবাগ, দুর্ভোগ সীমাহীন/ ছবি: শাকিল-বাংলানিউজ

‘মেঘবালিকা ’ নামের একটি কাপড়-দোকানের বিক্রেতা আবেদ। তিনি বলেন, ‘সড়ক এমন বেহাল হলে কী করে ব্যবসা হয়! মার্কেটের সামনে ৯/১০ ফুট গর্ত। ভয়ে তো ক্রেতারা এদিকে ভুলেও পা বাড়ান না। আর কিছুদিন এমন চলতে থাকলে ব্যবসা লাটে উঠবে। ’’

এদিকে সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও ধুলোবালি খানা-খন্দময় সড়কের পাশে নানা ঝুঁকি আর ভোগান্তি নিয়ে জীবন-যাপন করছেন। বাচ্চাদের স্কুল, কোচিং-এ আনা-নেওয়া করতে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।

মৌচাকের স্থায়ী বাসিন্দা আবু সায়েম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে টানা কষ্ট ভোগ করছি। এটা তো আর মৌচাক নেই। হয়ে গেছে যেন কনস্ট্রাকশন এরিয়া। ফ্লাইওভারের কাজের সঙ্গে এখন যে যেমন পারছে খেয়াল-খুশিমতো কাজ শুরু করে দিয়েছে। সমন্বয়ের বালাই নেই। আগে তো রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করা যেত এখন তা-ও বন্ধ। আমার বিল্ডিংয়ের সামনে গভীর গর্ত খুঁড়ে ভরাট না করে সেভাবেই তা রেখে দিয়েছে। প্রতিদিন সকালে বাচ্চাকে নিয়ে বাঁশের উপর দিয়ে গর্ত পার  হতে হয়। আসলে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। ’’

মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ডিআইটি রোডে রহমান হোমিও হলের সামনে ১৫ দিন ধরে গর্ত করে রেখেছে সিটি করপোরেশন। কাঠের তক্তা দিয়ে সে গর্ত পার হয়ে সেবা দিচ্ছেন ডাক্তার।

এখনকার ডা.খালিদ রহমান বলেন, ‘‘এত গভীর গর্ত খুঁড়ে রেখেছে যে, ভয়ে রোগীরা আর আসেই না। যে কোনো কাজের একটা পরিকল্পনা দরকার, আমার মনে হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের তা-ও নেই। আবার দেখেন, তিনহাত দূরেই বিদ্যুতের খোঁড়াখুঁড়ি। সব মিলে ভোগান্তি, বিরক্তি আর অস্বস্তিতে দিন যাচ্ছে। করার কিছুই নেই। ’’

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।