বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে প্রায় ১০ লাখ টাকার ফুল মজুদ করেছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। বাসন্তী উৎসবের মধ্যে দিয়ে তাদের ব্যবসা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে মহানগরীর ফুল বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তিনটি বিশেষ দিন পালনের লক্ষ্যে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা। কেবল বসন্ত বরণেই ৪ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি মিলে তাদের মজুদ করা ফুল বিক্রি হয়ে যাবে। অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যও।
এদিকে মহানগরীর প্রধান সড়কসমূহ ঘেঁষে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে এখন শোভা ছড়াচ্ছে আমদানি করা ফুল। এসব ফুল দিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের মালা গাঁথা, ফ্লাওয়ার রিং তৈরি ও কাগজ মোড়ানোর কাজ। গুরুত্বপূর্ণ দু’টি দিন পাশাপাশি হওয়ায় কেনাবেচা জমেছে তাদের। তবে গত বছরের চেয়ে এবার ফুলের দাম বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। তাই বাড়তি দামে ব্যবসায়ীদের মুখে হাঁসি ফুটলেও বছরের বিশেষ এই দিনে কিছুটা নারাজ হচ্ছেন ক্রেতারা।
রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে স্থায়ী ফুল ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
প্রতিটি ফুল দোকানের সামনেই রয়েছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা দরদাম করে নিজ নিজ পছন্দের ফুলটি বেছে নিতে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউ কেউ নিজ মাথার মাপ মত বাহারি ফুল দিয়ে তৈরি করা ‘ফ্লাওয়ার রিং’ পরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের দিয়েই।
মহানগরীর স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে দেড় শতাধিক ফুলের দোকানে বিক্রি হচ্ছে নানান নামের ও সুগন্ধের ফুল। এর মধ্যে লাল গোলাপ, জুঁই, চামেলী, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ নানা রঙ ও বর্ণের ফুল রয়েছে। বেশির ভাগ ফুলই আমদানি করা হয়েছে যশোরের ঝিকড়গাছা থেকে।
সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট এলাকার মর্ডান পুষ্প বিতানের রাজেশ রায় বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার একটি লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, গোলাপ কাগজে মোড়াতে লাগছে ২০-২৫ টাকা, অন্য রঙের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, রঙিন গ্লাডিওলাস ৩০-৩৫ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১৫-২০ টাকা, গাঁদা ৫০ টাকা ১শ’, ফুলের তোড়া সর্বনিম্ন সাড়ে ৩শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, জারবেরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এর মধ্যে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে লাল গোলাপ ও জারবেরা রয়েছে বলে জানান তিনি।
একই এলাকার অপর ব্যবসায়ী রতন কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বসন্ত জুড়েই তাদের ব্যবসার মৌসুম। পয়লা বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের ব্যবসা জমজমাট থাকে।
এরপর আবার স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নববর্ষে তাদের ব্যবসা জমে উঠে। তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এবার প্রায় ১০ লাখ টাকার ফুল মজুদ করেছেন। উৎসবের মধ্যেই যার সব বিক্রি হয়ে যাবে। বছরের অন্য সময় এত পরিমাণ ফুল বিক্রি হয় না। তাই ভরা মৌসুমে যা আয় হবে তা দিয়েই সারা বছর চলা যাবে। খরচ বাদ দিয়ে এর তিন ভাগের একভাগ মুনাফা থাকবে বলেও জানান এই ফুল ব্যবসায়ী।
ফুল কিনতে আসা রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফারজানা বিনতে আফরিন বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার ফুলের দাম চড়া। তাই ১০ টাকার একটি গোলাপ ৫০ টাকায় নিতে হচ্ছে। আর একটি সাধারণ ফ্লাওয়ার রিং ১৫০ টাকা এবং গোলাপ দেওয়া রিং ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উৎসবে দাম নিয়ে মাথা না ঘামালেও তা স্বাভাবিক থাকলে ক্রেতাদের মন আরও ভালো থাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
এসএস/এসআরএস/আরআই