ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জাতীয় স্মৃতিসৌধে তিন দপ্তরের আয়োজনে সিইসির সাদামাটা আপ্যায়ন!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
জাতীয় স্মৃতিসৌধে তিন দপ্তরের আয়োজনে সিইসির সাদামাটা আপ্যায়ন! জাতীয় স্মৃতিসৌধে তিন দপ্তরের আয়োজনে সিইসির সাদামাটা আপ্যায়ন/ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: হাতঘড়ির দিকে ঘুরেফিরেই নজর দিচ্ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান। একটি কর্মসূচি শেষ করে অন্যটিতে যোগ দিতে হবে। ঘড়ির কাঁটা আজ যেন দ্রুতগতিতেই চলছে! দ্বিতীয় কর্মসূচির সময় ঘনিয়ে এসেছে। অথচ যাদের ঘিরে প্রথম কর্মসূচি তাদেরই খবর নেই! মজিবুর রহমান একা নন। অনেকেই এভাবে বার বার তাকিয়েছেন ঘড়ির কাঁটায়।

শেষে উপস্থিত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুখে স্বস্তি ছড়িয়ে সোয়া ঘণ্টা দেরিতে উপস্থিত হলেন প্রথম কর্মসূচির মধ্যমনিরা।

বৃহস্পতিবার (ফেব্রুয়ারি ১৬) সকালে এমন চিত্রই ছিলো জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

শপথ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের অপর চার কমিশনার যান জাতীয় স্মৃতিসৌধে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে আনা হয় সাতটি বুকেট। একটি বড়। সেটি সিইসির জন্যে। এর মধ্যে ৫টি তুলে দেয়া হয় ৪ কমিশনার ও সচিবকে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে তিন দপ্তরের আয়োজনে সিইসির সাদামাটা আপ্যায়ন!অবশিষ্ট একটি বুকেট জেলা প্রশাসনের পক্ষে সিইসিকে তুলে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মজিবর রহমান।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি ফুলের বুকেটের মূল্য এক হাজার টাকা। যেটা তারা ব্যক্তিগত অর্থেই সংগ্রহ করেছেন।

কর্মসূচি শেষে স্মৃতিসৌধের ভিভিআইপি কক্ষে ব্যবস্থা ছিলো আপ্যায়নের। পর্যটন করপোরেশনের জয় রেস্তোঁরার সহকারী পরিবেশক মান্নান মাতব্বর নেতৃত্বে তিনজনের একটি দল ছিলেন সকাল আটটা থেকেই ব্যস্ত। কেউ বরই কেউ বা কমলা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করছিলেন। কেউ বা আবার পেয়ারা কেটে সাজিয়ে রাখছিলেন পিরিচে।

সহকারী পরিবেশক মান্নান মাতব্বর জানান, ‘আমরা জয় রেস্তোঁরা থেকে স্যুপ বানায়া আনছি। যে যা দেছে হেইগুলি সাজায়া রাখতেছি। ’

আহামরি তেমন কিছু নয়। তবে যাও বা ছিলো খাবারের তালিকায়। রীতিমতো তিনটি প্রতিষ্ঠান ছিলো সেগুলোর যোগাড়যন্ত্রে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের একটি সূত্র বলছে,পুলিশের পক্ষ থেকে ভেজিটেবল স্যুপ,কমলা,পানি,কুল বরই পেয়ারা, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে  কাজু বাদাম,প্রিংগেল চিপস আর গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয় বিস্কুট চানাচুর আর চা। জাতীয় স্মৃতিসৌধে সিইসিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা/ছবি: বাংলানিউজতবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা চা আর ভেজিটেবল স্যুপটাই ঠোঁটে তুলেছেন। অন্যগুলো ছুঁয়েও দেখেননি। এমনটিই জানালেন খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে নিয়োজিতরা।

এত সাদামাটা আয়োজন। তার জন্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পড়লো কেন?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন,আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করেছি। তার জন্যে পকেট থেকে হাজার দেড়েক টাকা খরচ করেছি।

কেন সরকারিভাবে বিল করা যায় না! "কি যে বলেন না। ডিপার্টমেন্টের চিফ আসতেছে। তার জন্যে এতটুকু না করলে চলে!

জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপ সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটাই তো স্বাভাবিক নর্মস। ’তাহলে বাজেট কি সরকারি?, ‘আর সব বাজেট ফাজেট! কিসব নিয়ে প্রশ্ন করেন না! জীবনের প্রথম শুনলাম!’

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।