যাত্রাপথে যাত্রীদের সঙ্গে হেলপারের এমন দৃশ্য অহরহ। তবে এক্ষেত্রে ঘটনাটির কারণ জানা গেলো, তালতলা থেকে উত্তরা পর্যন্ত এ বাসের ভাড়া ৩৫ টাকা।
যাত্রীদের অভিযোগ, মিরপুর-উত্তরা রুটে চলাচলকারী পরিবহনগুলো সিটিংয়ের নামে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়। কিন্তু একমাত্র ফ্লাইওভার ছাড়া সব জায়গা থেকে যাত্রী ওঠানামা করে। ফলে পরিবহনগুলোকে সিটিং সার্ভিস না বলে শুধু ‘ফ্লাইওভার সিটিং’ বলছেন যাত্রীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর থেকে উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, বসুন্ধরা, বাড্ডা ও রামপুরা যাওয়ার সব পরিবহনেই লেখা কম স্টপেজ ও সিটিং সার্ভিস। রাজধানীর যেকোনো এলাকা থেকে এ রুটের পরিবহন ভাড়া বেশি। যার মধ্যে সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ যাত্রীরা যেখান থেকেই উঠুন কালশী পার হলেই (সুপারভাইজার নেমে যাওয়ার পর) ২৫ থেকে ৩০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে (রুট ভেদে)।
জাবালে নূর, অছিম, নূর-এ-মক্কা, প্রজাপতি, বসুমতি, দোয়েল, আকিক, পরিবহনসহ আরো কয়েকটি পরিবহন গাবতলী, মিরপুর-১, ২, ১০ ও ১২ নম্বর হয়ে যেসব বাস কুড়িল, বসুন্ধরা, নতুনবাজার, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুরে চলাচল করে সে বাসগুলোতে সিটিংয়ের বালাই নেই। একমাত্র ফ্লাইওভারের উপর ছাড়া সব জায়গায় থামিয়ে লোকাল সার্ভিসের মতো যাত্রী ওঠায় পরিবহনগুলো। এমনকি কোনো কোনো স্টপেজে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ মিনিট করে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে।
এসব পরিবহনগুলোর সুপারভাইজারের চেকিং হয় কালশীতে। কালশী পার হওয়ার আগে পরে মিলিয়ে এক সিট দু’তিনবার বিক্রি হচ্ছে। আবার কালশীর পরে কেউ উঠলে তার কাছ থেকেও পুরো গন্তব্যের ভাড়া রাখার নজির রয়েছে। এভাবেই পরিবহনগুলো যাত্রীদের সঙ্গে সিটিংয়ের নাম করে প্রতারণা করছে প্রতিনিয়ত।
তবে এমন অনিয়ম চললেও বিষয়টি নিয়ে দেখার কেউ নেই। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার পরও যাত্রীরা বাধ্য হয়ে কষ্টের টাকা তুলে দিচ্ছেন বাস মালিকদের হাতে। অন্যদিকে, গাড়িতে কেউ বিষয়গুলোর প্রতিবাদ করলে তাকে দুর্ব্যবহারেরও শিকার হতে হয়।
জসিম উদ্দিন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী অভিযোগ করেন, কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য কালশী থেকে সপ্তাহে ৬ দিন কুড়িল বিশ্বরোড যেতে হয়। কিন্তু এই কয়েক কিলোমিটারের যাওয়ার জন্য বাস ভাড়া গুনতে হয় ২৫-৩০ টাকা। সিটিং হলেও চালক তার ইচ্ছেমতো যাত্রী তোলেন। একমাত্র ফ্লাইওভারের উপর ছাড়া, সব মোড়, রাস্তায়-এমনকি ফ্লাইওভারের মুখ থেকেও যাত্রী ওঠানো হয়।
আব্দুল মমিন নামে অপর এক যাত্রী জানান, আমি প্রতিদিন পল্লবী থেকে বসুন্ধরায় যাই। গাবতলী থেকে এ রুটে যেকোনো পরিবহন যখন ছাড়ে সেখান থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত সিটটি একবার বিক্রি হয়। আবার ১০ নম্বর থেকে ১২ নম্বর পর্যন্ত আরেকবার বিক্রি হয়। আর আমি নেমে যাওয়ার পর সিটটি আরো একবার বিক্রি হয়। অথচ বাসটি শুরু থেকে গন্তব্য পর্যন্ত যতো ভাড়া তার সবটাই আমার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। যে পথটা আমি গেলাম না, তার ভাড়াও আমাকে দিতে হয়।
তিনি আরো বলেন, এই রুটে অনিয়মের শেষ নেই। কেউ যদি ইসিবি চত্বর থেকে কুর্মিটোলাও আসেন তাকেও শুধু ফ্লাইওভার পার হতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা গুনতে হবে।
এ বিষয়ে জাবালে নূরের হেলপার সুবোধ বাংলানিউজকে বলেন, ভাড়া নিয়ে আমাগো সঙ্গে কথা কইয়্যা লাভ আছে। মালিকগো ধরেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
এমসি/জেডএস