বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে কথাগুলো বলছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষা সৈনিক শামছুল হুদা। তার সঙ্গে আলাপে উঠে আসে একুশের নানান গল্প ও স্বপ্নের বাংলাদেশের কথা।
তিনি বলেন, সেদিন একটি স্বপ্নের দেশর জন্য আমরা লড়েছিলাম। যে দেশের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। সর্বস্তরে প্রয়োগ হবে এ ভাষার। শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাকে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি।
তিনি বলেন, কিন্তু দুঃখ লাগে-যখন দেখি ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো আমরা স্বর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ করতে পারিনি। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্মারক, আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক শহীদ মিনার আজ চরমভাবে অবহেলার শিকার। একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই এর কদর বেড়ে যায়। তাছাড়া অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকে এ স্মৃতির মিনার। এক সময় ফুল দেওয়া নিয়ে এ পবিত্র স্থানে মারামারি হতো। এটা আমাদের জন্য চরম দুর্ভাগ্য। শহীদ মিনারের পত্রিততা রক্ষা করা আমাদের নৈতকি দায়িত্ব। কারণ মিনার সারাবিশ্বের মানুষের কাছে তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারাবিশ্বের। ভাষা সৈনিক আমরা যারা বেঁচে আছি তারা সবাই গর্ববোধ করি বাংলা ভাষার জন্য। আমি এই ভেবে তৃপ্ত এবং আনন্দিত হই যে, সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষার কদর হয়েছে সারাবিশ্বে।
শামছুল হুদা শুধু ভাষা সৈনিক ছিলেন না- তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধেরও অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমির ব্যাপারে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনই মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও সূচনার কেন্দ্র।
স্বাধীন বাংলায় অর্জন নিয়ে তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক খাত, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি খাতে উন্নতি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন একটা উল্লেখযোগ্য দিক। শিক্ষা ক্ষেত্রেও স্বাধীন বাংলাদেশ অনেক অগ্রসরমান। কিন্তু নৈতিক শিক্ষার উন্নতি হয়নি এ দেশের মানুষের তেমন একটা। দেশ এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে।
তিনি তরুণদের উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশের উন্নতির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের সামাজিক দায় বোধ, নৈতিকতা বোধ থাকতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে, দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। তবেই একুশের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে।
ভাষা সৈনিক শামছুল হুদা
মহান ভাষাসৈনিক শামসুল হুদা ০১ ডিসেম্বর ১৯৩২ সালে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম মো. ইদ্রিস মিয়া, মার নাম মরহুমা রহিমা খাতুন। শিক্ষাজীবনে শামসুল হুদা ১৯৪৭ সালে তখনকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নোয়াখালী জেলা থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি, পাকিস্থানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনির্ভাসিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে এমএস ডিগ্রি লাভ করেন। ভাষা-আন্দোলনের কারণে তখনকার পাকিস্থান সরকার কর্তৃক সেন্ট্রাল সুপেরিয়র সার্ভিস (সিএসপি) থেকে বঞ্চিত করা হয়।
শামসুল হুদা অসংখ্য সম্মাননা পদক ও পুরস্কার লাভ করেছেন। তার মধ্যে একুশে পদক পদক-২০১৪, স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তিতে বিজয় দিবস সম্মাননা পদক, বিশ্ব বাঙালি সম্মেলনের সৌজন্যে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
আইএ