বিআরটিএ নির্ধারণ করার আগে ভাড়া বাড়ানো হবে না। এছাড়া দেশের সবগুলো বিভাগ ও জেলা শহরে গ্যাস চালিত গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ার আশংকা করা হচ্ছে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গণপরিবহন মালিক ও সিএনজি স্টেশন মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ জানান, রোববার বিআরটিএ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে বাস ভাড়া বাড়ানোর জন্য চিঠি দেওয়া হবে।
বিআরটিএর ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটিতে খন্দকার এনায়েতুল্লাহ নিজেও রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুনর্নির্ধারণ কমিটি ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া ঠিক করবে। তার আগে ভাড়া বাড়বে না।
তিনি আরো জানান, দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে তেলের সম্পর্ক। তেলের দাম বাড়লে এসব বাসের ভাড়া বাড়ে। সিএনজি চালিত বাস ঢাকা মহানগরী ও চট্টগ্রামে চলে। এজন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফারুক তালুকদার সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, আন্তঃজেলা রুটে কিছু সংখ্যক বাস গ্যাসে চলে। গ্যাস চালিত অধিকাংশ গাড়ি সিটি এলাকায় চলছে। যে কারণে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও আন্তঃজেলা রুটে ভাড়ার কোনো পরিবর্তন আসবে না।
‘গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগণের ওপর বাড়তি ভাড়ার চাপ পড়বে’ মন্তব্য করে একই সংগঠনের সহ-সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ডিজেলের দাম বাড়েনি। সে কারণে ডিজেল এবং গ্যাসের গাড়ির মধ্যে ভাড়া নির্ধারণ বিষয়টি একটু জঠিল হবে। তখন খুঁজতে হবে কোন এলাকার গাড়িগুলো গ্যাসে চলছে আর কোনগুলো তেলে চলে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে শুধু ঢাকা আর চট্টগ্রামেই নয় দেশের সব জায়গায় গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে বলে মনে করেন সিএনজি স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশেনের সদস্য আমিরুজ্জামান চৌধুরী দুলু।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দূরপাল্লার বাস ছাড়াও জেলা সড়কগুলোতে সিএনজি গ্যাস ব্যবহার করে বাস-মাইক্রোবাস ও মিনিবাস চলে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় হাজার হাজার লেগুনা, মিনি কাভার্ডভ্যান শতভাগ গ্যাসে চলে। এসবের ভাড়া বেড়ে যাবে।
ওনাস অ্যাসোসিয়েশেনের সিলেট বিভাগীয় সেক্রেটারি দুলু বলেন, যে উদ্দেশ্যে ২০০১ ও ২০০২ সালে বায়ু দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য সিএনজি গ্যাসের মাধ্যমে গাড়ি চালনা শুরু হয়েছিলো সেটি ব্যর্থ হবে। পরিবহন মালিকরা আবার ডিজেল দিয়ে গাড়ি চালানোতে ফিরে আসবে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তিকতা নেই উল্লেখ করে আরেকজন সিএনজি স্টেশন মালিক বলেন, ‘প্রতিটি গ্যাসফিল্ডের শত শত কোটি টাকা ব্যাংকে অলস পড়ে আছে। আর আমরা মোট গ্যাস উৎপাদনের মাত্র ৫ ভাগ গ্যাস ‘কনজিউম’ করি। বিনিময়ে রাজস্ব দিতে হয় ২২ ভাগ। তার মানে আমাদের ‘রেট’ অনেক ‘হাই’। তারপরে আর গ্যাসের দাম ভাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখিনি’।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত জানুয়ারি থেকেই বিভিন্ন রুটে ভাড়া বাড়ানোর নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। এখন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এটাকে বৈধতা দেওয়া হলে মালিক ও সরকার লাভবান হবে। আর ক্ষতিগ্রস্থ হবে জনগণ’।
তিনি তার সংগঠনের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, আন্তঃজেলা ও দুরপাল্লার রুটে ৬০ শতাংশ গাড়ি সিএনজি গ্যাসে চলে আর সিটিতে প্রায় ৯০ শতাংশ গাড়ি গ্যাসে চলছে। যে কারণে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে সর্বস্তরের মানুষ ভোগন্তির মধ্যে পড়বেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ঘোষণা অনুযায়ী, মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার সিএনজি’র দাম হবে ৩৮ টাকা, জুনে গিয়ে দাঁড়াবে ৪০ টাকায়।
এদিকে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীতে আধাবেলা হরতাল আহ্বান করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭
এসএ/বিএস