গত এক মাসে এই এলাকায় ৮০০ কিশোর শিক্ষার্থীকে আটক করে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে পুরো রাজধানীতেই এই অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
আছাদুজ্জামান মিয়া এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চাই।
তিনি আরা বলেন, রাজধানীতে বিভিন্ন চেকপোস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কোনো কিশোরকে আটক করার পর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে মুচলেকা দিয়ে হস্তান্তর করা হচ্ছে। অপরাধী হিসেবে নয়, প্রথম অবস্থায় সর্তক করার জন্য ধরা হচ্ছে। তবে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের উত্তরা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিধান ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘উত্তরায় কিশোর অপরাধ দমনের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে গত ৩০ জানুয়ারি কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ ও মাদক বিরোধী সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে স্কুল ড্রেসে বাইরে ঘোরাফেরা করলে শিক্ষার্থীদের আটক করে অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিশুরা অপরাধে জড়ালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে গত এক মাসে এই এলাকায় ৮০০ কিশোরকে শিক্ষার্থীকে আটক করে অভিভাবকদের কাছে সোপর্দ করা হয়। অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে শিশুদের সব বিষয়ে যেন তারা খোঁজ-খবর রাখে। ‘
এছাড়া ফেসবুকেও নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি সন্ধ্যার পর কিশোরদের মোটরবাইক দিয়ে মহড়া এবং দলগতভাবে আড্ডা দেওয়া বন্ধে করতে পুরো রাজধানীতে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি উত্তরায় কিশোরদের এলাকাভিত্তিক গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন হয় উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদনান কবীর। অন্যদিকে গত ১৮ জানুয়ারি ফার্মগেটের তেজকুনি পাড়ায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হয় আব্দুল আজিজ নামে এক কিশোর।
উত্তরায় আদনান কবীর এবং ফার্মগেটের তেজকুনি পাড়ায় আব্দুল আজিজ হত্যার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। এসব হত্যার তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।
পুলিশের তথ্য থেকে জানা যায়, ফেসবুকে নাইন স্টার, ডিসকো বয়েসসহ বিভিন্ন গ্রুপ খুলে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে কিশোরেরা। এই ফেসবুক দ্বন্দ্বের কারণেই খুন হয় আদনান। উত্তরা এলাকায় ‘নাইন স্টার’ আর ‘ডিস্কো বয়েজ’ ছাড়াও কিশোরদের আরও বেশ কয়েকটি গ্রুপের খোঁজ পায় পুলিশ।
এদিকে পুলিশের এই পদক্ষেপের প্রসংশা করেছেন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ কিশোর অপরাধ দমনে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে মনিটরিং প্রয়োজন। এছাড়া কোমলমতি শিশু ও অভিভাবকেরা যেন হয়রানির শিকার না হয় সে দিকেও পুলিশের খেয়াল রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
রাশেদা কে চৌধুরী শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, পুলিশের পাশাপাশি অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক ক্ষেত্রে সচেতনতারও অনেক গুরুত্ব রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ হোসেনের বাবা আকরাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশের উদ্যোগে আমরা খুশি। আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করতে চাই। তাছাড়া আমরা পারিবারিকভাবেও সচেতন রয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭
আরএটি/আরআই