অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফের কাছে অনুষ্ঠানিকভাবে সাইকেলটি তুলে দেন ব্যবহারকারী নড়াইল সদরের ডৌয়াতলা গ্রামের অলিয়ার রহমানের ছেলে এমদাদুল হক ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের শ্যালক মশিয়ার রহমান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ।
এর আগে বিভিন্ন মিডিয়ায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ব্যবহৃত সাইকেল বিষয়ে সংবাদ দেখে জেলা প্রশাসন সাইকেলটি নূর মোহাম্মদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশের মাধ্যমে সাইকেলটির সন্ধান পাওয়ার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইকেল মালিকের (বর্তমান যার কাছে ছিল) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং তাকে অনুরোধ করা হয় সাইকেলটি জাদুঘরে দেওয়ার জন্য।
সাইকেল মালিক জাদুঘরে সাইকেল দিতে রাজি হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তা জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হলো।
জানা গেছে, যুদ্ধ চলাকালীন শেষবারের মতো সেই সাইকেলটি চালিয়ে নড়াইলের গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।
দীর্ঘদিন সাইকেল ব্যবহারকারী নড়াইল সদরের ডৌয়াতলা গ্রামের অলিয়ার রহমানের ছেলে এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বাবাব মুখে অনেকবার শুনেছি নূর মোহাম্মদ যুদ্ধের সময় সাইকেলটি আমার বাবাকে দিয়ে গিয়েছিলেন। আমার বাবা এ সাইকেলটি অনেকদিন ব্যবহার করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি সাইকেলটি ব্যবহার করছিলাম। এ সাইকেলের সঙ্গে নূর মোহাম্মদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সরকার এখন সাইকেলটি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষণ করেছে, এতে আমি অনেক খুশি। সরকারের কাছে আমার দাবি তারা যেন আমাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা বাংলানিউজকে বলেন, সাইকেলটি আমার স্বামী ব্যবহার করতেন। আমি জানি তিনি সাইকেলটি অলিয়ার রহমানের কাছে রেখে গিয়েছিলেন। সরকার এখন সাইকেলটি জাদুঘরে সংরক্ষণ করেছে। এখন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ব্যক্তিগত সাইকেলটি দেখতে পারবে। তিনি সরকারের কাছে দাবি করেন এতোদিন যে ছেলেটির কাছে সাইকেলটি ছিল তাকে যেন একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্তমান সাইকেল মালিককে একটি নতুন সাইকেল কিনে দেওয়া অথবা সমপরিমাণ অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চাকরির বিষয়টি তিনি বিবেচনা করে দেখবেন বলে জানান।
এদিকে, ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে রোববার দিনব্যাপী সদর উপজেলার নূর মোহম্মদ নগরে কোরআনখানি, র্যালি, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচিত্র প্রদর্শনী, শহীদের স্মৃতিফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ, গার্ড অব অনার দেওয়া, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে মোহাম্মদ আমানত শেখ ও জেন্নাতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
নূর মোহাম্মদ শেখের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল ও তিন মেয়ে নড়াইলসহ যশোরে বসবাস করেন।
১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
বাংলাদে সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
আরবি/আরএ