ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রায়ে অসন্তুষ্ট সিফাতের পরিবার-সহপাঠীরা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
রায়ে অসন্তুষ্ট সিফাতের পরিবার-সহপাঠীরা ওয়াহিদা সিফাত

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলার রায়ে অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন তার পরিবার ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সিফাতের চাচা ও মামলার বাদী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ময়নাতদন্তে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করা সত্ত্বেও আদালত এটিকে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা হিসেবে গণ্য করে রায় দিয়েছেন।

রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই।

তিনি বলেন, ‘যদি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা হিসেবেও ধরা হয়, তাতেও আসামিপক্ষ আত্মহত্যার পক্ষে কোনো যুক্তি দেখাতে পারেনি, সেক্ষেত্রে সিফাতের শ্বশুর-শাশুড়ি কীভাবে খালাস পায়?’ এ রায়ের বিরুদ্ধে শিগগিরই উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, সিফাতের মা ফারজানা বানু মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে জানান, আসামিরা ছিলেন সবাই প্রভাবশালী। আমরা তাদের কাছে হেরে গেছি। এ রায়ে আমরা হতাশ। আমরা অবশ্যই উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

সিফাতের মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে হত্যার সব আলামত আছে। তার শরীরে জখম ছিল। ওরা আমার মেয়ের হাতও ভেঙে দিয়েছিল। প্রথম ময়নাতদন্তে সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি। তবে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করে পরে সেগুলো প্রকাশ হয়েছে। আসামিরা বরাবরই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিল। সব প্রমাণাদি আছে, নথি আছে। এরপরেও এমন রায়ে আমরা হতাশ। ’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেহেতু ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এটি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত, সেদিক থেকে আমাদের প্রত্যাশা ছিলো, দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু হত্যাকারীকে যে সাজা দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ’

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখেছিলাম, তাকে (সিফাত) হত্যা করার বিষয়টি উঠে এসেছিল। কিন্তু রায়ের সঠিক বাস্তবায়ন হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যেটুকু শুনেছি, তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই। এছাড়া রায়ে একজন ময়নাতদন্ত চিকিৎসক পক্ষপাত করেও খালাস পেলেন, যা আমাদের বিচলিত করছে।

সিফাতের সহপাঠী মেহেরুল সুজন বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তবে এ রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তোষ প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ, যেখানে কয়েক দফা ময়নাতদন্তের পর মেডিকেল বোর্ডগুলো সিফাতকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিলো, সেখানে আমরা এমন রায়ে হতাশ।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক সাঈদ আহম্মেদ দেশব্যাপী আলোচিত এ মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সিফতের স্বামী মো. আসিফ পিসলিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার অন্য তিন আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। মামলায় আসামি ছিলেন- সিফাতের স্বামী মো. আসিফ পিসলি, শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী ও সিফাতের মৃতদেহের প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান।

প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ডা. জোবাইদুর রহমান বলেছিলেন, ‘সিফাত আত্মহত্যা করেছেন। ’ কোনো প্রকার ভিসেরা রিপোর্ট ছাড়াই তিনি ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে ২০১৫ সালের ২১ জুন কবর থেকে সিফাতের মরদেহ তুলে ফের ময়নাতদন্ত করা হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক ফের ময়নাতদন্ত করে জানান আত্মহত্যা নয়, সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে।

পরে গত বছর ২২ মার্চ নওগাঁ জেলা সিআইডি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আহমেদ আলী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। গত বছরের ১০ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় মোহাম্মদ হোসেন রমজানের বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাতের। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল মহানগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
এসএস/জিপি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।