বাংলাদেশ ২০০৮ ও ২০০৯-- এই দুই বছরব্যাপী তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়েছে। ওই সময়টায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি কসোভোকে স্বীকৃতি দিতে বারংবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এভাবে আওয়ামী লীগের সরকারের টানা দুই মেয়াদে প্রায় ৮ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অবশেষে দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে মুসলিমপ্রধান ইউরোপীয় রাষ্ট্র কসোভোকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল বাংলাদেশ।
২০১৭ সালে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কসোভোকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে তত্ত্ববধায়ক সরকারে আমলে নিযুক্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাবেক সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বাংলা নিউজকে সোমবার বিকেলে বলেন, ‘আমরা আগেই সার্বিয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছি। তাই কসোভোকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে কিছু চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে। এতদিন আমরা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি পলিসি’-তে ছিলাম। এখন হয়ত স্বীকৃতি দেওয়ার সময় হয়েছে বলে মনে করছে সরকার। কী যুক্তি সরকারে যারা কাজ করছেন তারাই বলতে পারবেন। ’’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমি মনে করি, সরকার এখন হয়ত মনে করছে সার্বিয়ার প্রতিক্রিয়া যে মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়েও কসোভোর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তা খুবই অন্যায় হয়েছে। তাই তাদের স্বীকৃতি দেওয়াই এখন বেশি যুক্তিযুক্ত। কসোভোর ওপর বাংলাদেশের সমর্থন সব সময়ই ছিলো। কিন্তু আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় ছিলো সরকার। ’
উল্লেখ্য, সৌদি আরবসহ ওআইসিভূক্ত বেশ কয়েকটি দেশ অনেক আগেই কসো্ভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একই মনোভাবের হলেও অনেক সময় স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। এর ফলে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে সেটাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয় বা দিতে হয়। ’
পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তার আগমনের আগে কসোভোকে স্বীকৃতি দেওয়া বিষয়টি একটি ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২২ জুলাই আন্তর্জাতিক আদালতের [আইসিজে] বিচারকরা রায় দেন, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কসোভো স্বাধীনতার যে ঘোষণা দেয়, তা কোনো আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করেনি। অর্থাৎ কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণা বৈধ।
বিগত শতকের নব্বই-এর দশকে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোশালিস্ট রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়ার পতনের পর জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মেসিদোনিয়া, বসনিয়া হার্জেগোভিনা এবং সার্বিয়া নামে পাঁচটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কসোভোর স্বাধীনতাকে অস্ত্রের মুখে দমিয়ে দেবার সব চেষ্টাই করে সার্বিয়রা।
কিন্তু কসোভোর মুসলমানরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাদের সমর্থন করে প্রতিবেশী আলবেনিয়া। কসোভো লিবারেশন আর্মি [কেএলএ] নামে গেরিলা সংগঠনের মাধ্যমে তারা শুরু করে হানাদার সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
কেজেড/জেএম