ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নরম-গরম জুনায়েদ বাবুনগরী!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৭
নরম-গরম জুনায়েদ বাবুনগরী! বক্তব্য রাখছেন জুনায়েদ বাবুনগরী, ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: দেশবরেণ্য মুহাদ্দিস হিসেবে পরিচিত তিনি। তার আরেকটা পরিচয় তিনি হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব। প্রচলিত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও হেফাজতের দায়িত্ব নেয়ার পরেই তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

বছর চারেক আগে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রেফতার হন। রিমান্ড আর দীর্ঘ কারাভোগ শেষে মুক্তি পান।

এরপর অনেক দিন চুপ ছিলেন। নিষ্ক্রিয় ছিলেন সংগঠনেও।

ঘরোয়া কর্মসূচি আর বক্তব্য-বিবৃতিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলেও ইদানীং আবারও সরব হয়ে উঠেছেন হাটহাজারীর দারুল উলুম মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জুনায়েদ বাবুনগরী।

হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে না হলেও দেশের ছোট-বড় বিভিন্ন ইসলামি মাহফিলে নিয়মিতই উপস্থিত হচ্ছেন তিনি। নানা কারণেই মানসিকভাবে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়লেও নরম-গরম কৌশলেই বক্তৃতা করছেন। কতিপয় ব্লগারের নাস্তিক্যবাদ নিয়ে কথা বলে নিজেদের অস্তিত্বেরও জানান দিচ্ছেন।

শনিবার (০৪ মার্চ) রাতে ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহাসিক আঞ্জুমান ঈদগাহমাঠে ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহী আয়োজিত সীরাতুন্নাবী সম্মেলনেও একইভাবে নরম-গরম কৌশলেই বক্তব্য রাখলেন তিনি।

নাস্তিকতার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্লগারদের মৃত্যুদণ্ডের আইন করার দাবিতে নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানালেন।

কওমী মাদ্রাসা নিয়ে এক মন্ত্রীর (নাম উল্লেখ না করে) বছর কয়েক আগের দেয়া বক্তব্যের সূত্র ধরেই এদিন বক্তব্য শুরু করেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

বলেন, ‘এক মন্ত্রী বলেছিলেন কওমী মাদ্রাসা বিপজ্জনক। আমি বলেছিলাম ওই মন্ত্রীই বিপজ্জনক। কওমী মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী বের হয় না। বের হয় ওলামায়ে রাব্বানী, ইমাম, খতিব ও আদর্শ শিক্ষক। ’

‘ওলামায়ে কেরাম বা কওমী মাদ্রাসা নিয়ে এদিক-সেদিক বললে খবর আছে’ এমন হুমকি উচ্চারণ করে তিনি বলেন:‘ওলামায়ে কেরাম নাস্তিক-মুরতাদদের চক্ষু তুলে ফেলবে। ’

তিনি আরও হুমকি দেন: ‘ ওলামায়ে-কেরামের পক্ষে বলতে গিয়ে নাস্তিক মুরতাদদের বিপক্ষে গেলে আমরা দায়ী না। কোনো সরকারের বিপক্ষে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। এদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানরা থাকতে পারলেও নাস্তিক ব্লগাররা থাকতে পারবে না। ’

‘এদেশের মানুষ ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না’ মন্তব্য করে বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজতের আন্দোলনের মূল কারণ হলো নবী করিম (সা:) কে নিয়ে নাস্তিক মুরতাদদের কটূক্তি। এগুলো ফেসবুকে, অনলাইনে দেখা যায়। ’

এর পরপরই তিনি এক ভয়ানক হুমকি উচ্চারণ করেন, ‘যারা নবীর শত্রু, যারা নবীর সঙ্গে বেয়াদবি করে তাদের মাথা দেহের সঙ্গে থাকতে পারে না। ’

তার এ গরম বক্তব্যে মাহফিলে উপস্থিত হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি শোনেন। এরপর নিজের দেয়া বক্তব্য থেকে সরে আসেন আল্লামা বাবুনগরী। এবার সুর নরম করে তিনি বলেন,‘ আমরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবো না। গোয়েন্দারা আমাদের কথা পৌঁছাবেন। ’

‘আমরা দাবি পেশ করবো। যারা নবীর দুশমন-শত্রু, তাদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মহান জাতীয় সংসদে বিল পাস করতে হবে। কারণ দেশের ১৬ কোটি তৌহিদী জনতা নবীর আশেক। ’

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখায় আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে শায়খুল হাদীস জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সরকার বহাল রেখেছে। আমরা সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছি। এখন সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণ করলে সরকারকে আবারো ধন্যবাদ জানাবো। আমরা ধন্যবাদ জানানোর অপেক্ষায় আছি। ’   

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এমএএএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।