ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শরীরে সেলাইন নিয়েই চিকিৎসা পেতে ঘুরছেন রোগী

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৭
শরীরে সেলাইন নিয়েই চিকিৎসা পেতে ঘুরছেন রোগী সেলাইন নিয়েই চিকিৎসা পেতে ঘুরছেন রোগী-ছবি- আরিফ জাহান

বগুড়া: শরীরে সেলাইন পুশ করা। সেই সেলাইনের প্যাকেট ধরে আছেন স্বজন। মাথায় আঘাতের স্থানে পট্টি লাগানো। গালেও আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। গাড়ি থেকে নামানোর পর ধরাধরি করে স্বজনরা রোগীকে নিয়ে ছুটছেন জরুরি বিভাগের দিকে।
 
 

তবে কিছু দূর এগোতেই রোগীকে নিয়ে থমকে গেলেন সবাই। তখন বেলা ১২টার মতো।

জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। রোগী জমিলা তখনো ছটফট করছিলেন। কিন্তু কারো কিছুই করার ছিল না। অসহায়ের মতো শুধু সবাই তাকাতাকি করছিলেন এদিক-ওদিক।
 
বাবা গোলাম মোস্তফা ব্যান্ডেজে মোড়ানো শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে বহির্বিভাগে দাঁড়িয়ে ছিলেন অসহায়ের মতো। চিকিৎসক না থাকায় সন্তানকে দেখাতে পারছিলেন না। শুধুই পায়চারী করছিলেন।
 
রোববার (০৫ মার্চ) দুপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) গেলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের চরম ভোগান্তির এ করুণ দৃশ্য দেখা যায়।
 
রোগীর স্বজনকে মারধরের ঘটনায় চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে শাস্তি দেওয়ায় কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি দাবি আদায়ে বিভিন্ন কমসূচি পালন করছেন তারা। ব্যান্ডেজে মোড়ানো শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে বহির্বিভাগে দাঁড়িয়ে
 
এতে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সহসায় এ পরিস্থিতির উত্তোরণ ঘটবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
 
দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা শজিমেকের বহির্বিভাগে অবস্থান নিয়ে বসে পড়েন। অনেক রোগী বাইরে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন। আবার অনেকেই বেডে শুয়ে ছটফট করছেন।
 
কিন্তু কোথাও কোনো চিকিৎসক নেই। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে ব্যস্ত। অন্য চিকিৎসকদেরও দেখা নেই। এতে রোগীদের অপেক্ষার প্রহর গোনা ছাড়া উপায়ও ছিল না।
 
শহিদুল ইসলাম, শারমিন নাহার, সুজন মেহেদীসহ একাধিক রোগী বাংলানিউজকে জানান, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে শজিমেকে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। এ কারণেই তাদের এখানে আসা। কিন্তু চিকিৎসকরা রোগীর সেবা বাদ দিয়ে আন্দোলনে ব্যস্ত। অনেকেই বেডে শুয়ে ছটফট করছেন
 
তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, হাসপাতালে আসার পর থেকেই চিকিৎসকের জন্য ছোটাছুটি করছি। কিন্তু চিকিৎসকদের সাক্ষাৎ মেলাতে পারি নাই। অন্য কোথাও যাবো সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
 
কেননা এমনিতেই অবস্থা খুবই খারাপ। টানাহেঁচড়া করলে যদি আরো ক্ষতি হয়, এ ভয়ে আমরাসহ অনেকেই সেই সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালে অপেক্ষা করছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছিনা বলেও অভিযোগ করেন রোগীরা।
 
শজিমেক হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করায় চিকিৎসা সেবা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাদের কাজে ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
 
অন্য চিকিৎসকরা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি দায়িত্বপালন করছেন। তবে বাড়তি রোগীর চাপে পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলেও যোগ করেন উপাধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।