ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বেহাল ৫৫ পন্টুন, প্রয়োজন ৪৫টি নতুন ফেরি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৭
বেহাল ৫৫ পন্টুন, প্রয়োজন ৪৫টি নতুন ফেরি ফেরি-ফাইল ফটো

ঢাকা: সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) ফেরি নির্মাণ বিভাগে অনেক পুরাতন ফেরি জোড়াতালি দিয়ে চলছে। অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পার হওয়ার কারণে এগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত মালামাল, যাত্রী ও যানবাহন পরিবহন করা যাচ্ছে না।

অনেক পন্টুনের অবস্থাও খুবই খারাপ। এ মুহূর্তে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সব পন্টুনের স্থায়িত্বকাল অথবা অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে।

এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে ৪৫টি ফেরি কেনাসহ নতুন করে ৫৫টি পন্টুন নির্মাণ জরুরি বলে  মনে করছে সংস্থাটি।
 
খুলনা ফেরি সার্কেল, বরিশাল মেকানিক্যাল সার্কেল, ঢাকা ফেরি প্ল্যানিং সার্কেল, ঢাকা ফেরি সার্কেল, সিলেট মেকানিক্যাল সার্কেল, ঢাকা কারখানা সার্কেল, চট্টগ্রাম কারখানা সার্কেল ও রাজশাহী মেকানিক্যাল সার্কেলের ফেরিঘাট সঠিকভাবে সচল রাখতে নতুন ও বাড়তি পন্টুন ও ফেরি দরকার।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতায় আটটি সার্কেলের মোট ৪১টি ফেরিঘাট রয়েছে।   সাধারণত ছোট নদীতে সওজ-এর ফেরি চলাচল করে। যেসব নদীর আধা থেকে এক কিলোমিটার প্রশস্ত।
অন্যদিকে বড় নদী বিশেষ করে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় চলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) ফেরি।
 
স্থানীয় মানুষকে সেবা দিতে এসব ফেরির গুরুত্বও অনেক। বিআইডব্লিউটিসি এবং সওজ-এর ফেরির ইঞ্জিন থেকে শুরু করে সব কিছুই আলাদা। বলা চলে সওজ-এর আওতায় স্বল্প পরিসরে চলাচল করে ফেরি।    
 
ফেরিসংকট ও বেহাল পন্টুনের কারণে ঘাটে অনেক সময় জটলা লেগে থাকে। এই জটলা ঘাট পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে মহাসড়কে। ঘাট পারাপারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয় বিভিন্ন পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনকে। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে, সড়ক নিরাপদ ও জটলামুক্ত রাখতে হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন ফেরি কিনতে হবে। পাশাপাশি পন্টুন নির্মাণ অথবা পুন:মেরামত করতে হবে বলে জানায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
 
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের পুরাতন ও জরাজীর্ণ ফেরি ও পন্টুনগুলোর পুনর্বাসন, মেরামত, প্রতিস্থাপন জরুরি। সেইসঙ্গে জরুরি নতুন ফেরি ক্রয় ও পন্টুন নির্মাণের মাধ্যমে ফেরি সার্ভিস সচল রাখা।
 
সওজ-এর ফেরি নির্মাণ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী  বাংলানিউজকে বলেন, ‘সওজ-এর যান্ত্রিক উইংয়ের আওতায় ৪১টি ফেরিঘাটে জরুরি ভিত্তিতে নতুন আঙ্গিকে ৫৫টি পন্টুন নির্মাণ করতে হবে। এর পাশাপশি ৪৫টি ফেরি একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য। তাই পন্টুন নির্মাণসহ ফেরি কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এই লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। আমি যতোদূর জানি প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। ’
 
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানায়, সমগ্র বাংলাদেশে অধিদফতরের আওতায় বর্তমানে ৪১টি ফেরি ঘাট রয়েছে। এসবে মোট ১৬৯টি ফেরি ও ২১৪টি পন্টুন রয়েছে। ৫৫টি পন্টুন একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী, এর পাশপাশি ৫৫টি ফেরি পুনর্বাসনেরও অযোগ্য। সেবা দিতে জরুরি মুহূর্তে ফেরি কেনাসহ পন্টুন নির্মাণ জরুরি।
 
মোট ফেরির মধ্যে ৯০টি চলমান, ৩৪টি মেরামত করে কোনো রকম চালানো যায়। তবে ৪৫টি একেবারেই মেরামতঅযোগ্য।
অন্যদিকে মোট পন্টুনের মধ্যে ১২৫টি সচল ও ৩৪টি মেরামত করে ব্যবহারউপযোগী।
 
সম্প্রতি নতুনভাবে আটটি ফেরিঘাট নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে একটি ফেরিঘাট ফরিদপুর সড়ক বিভাগ ও সাতটি ফেরিঘাট কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতায় পড়েছে। আটটি ফেরিঘাটের জন্যও জরুরি মুহূর্তে ন্যূনতম ১৬টি ফেরি, ১৬টি পন্টুন ও ৩২টি প্রপালশন ইউনিট প্রয়োজন।
 
তাছাড়া, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের বেশিরভাগ ফেরি ও পন্টুন বেশ পুরাতন। এগুলো প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে চলমান রয়েছে। মিঠা পানিতে ফেরি ও পন্টুনের স্থায়িত্বকাল ১৬ থেকে ১৮ বছর এবং লোনা পানিতে ১০ থেকে ১২ বছর। ফলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন পন্টুনের স্থায়িত্বকাল প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
 
এই দৈন্যদশা কাটাতে ‘ফেরি ও পন্টুন নির্মাণ/পুনর্বাসন এবং ডকইয়ার্ড নির্মাণ ’প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। চলতি বছর থেকে শুরু করে জুন ২০১৮ মেয়াদে ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয় করে ফেরি কেনাসহ পন্টুন নির্মাণ করা হবে।
 
প্রকল্পের আওতায় ফেরি কেনাসহ পন্টুন নির্মাণে এক মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। প্রায় ৬৮টি ফেরি কিনতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ৫০টি ইউটিলিটি টাইপ-১ ফেরি এবং ১৮টি ইউটিলিটি টাইপ-২ ফেরি। প্রাথমিকভাবে ৬৬টি পন্টুন কেনার পাশাপাশি ৫০টি গ্যাংয়েও নির্মাণ করা হবে।
 
ফেরি চলাচলে সহায়তার জন্য একটি কমপ্রেসার, স্যান্ড ব্লাস্টিং মেশিনসহ ১০ সেট কাটার কেনা হবে। ফেরি পেইন্টিংয়ের জন্য একটি এয়ারলেস স্প্রে মেশিনসহ ২০ সেট ওয়েলডিং মেশিনও কেনা হবে। অন্যান্য ফেরি পুনর্বাসনের জন্য থাকছে ৭২ সেট স্পেয়ার পার্টস। ১২ হাজার লাখ ঘন মিটার স্যান্ড ফিলিং অ্যাসভাকেশন ও স্লিপওয়েজ এরিয়ার কাছে ব্যাংক প্রটেকশন করা হবে। স্লিপওয়েজ নির্মাণ, বিভিন্ন ধরনের চেইন পুলে ব্লক ও হ্যান্ড ট্যুলসও কেনার উদ্যোগ আছে। ভবিষ্যতের চাহিদা মেটানোর জন্যই প্রকল্পের আওতায় ফেরি ও পন্টুনসহ আনুষাঙ্গিক আইটেম কেনা হচ্ছে।
 
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক বলেন, ‘সওজ-এর অনেক ফেরি সংকট আছে। এর পাশাপাশি পন্টুনগুলো অনেক পুরাতন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আওতায় আমরা নতুন নতুন ফেরি কিনবো। এছাড়া পুরাতন ফেরি সংস্কার করবো। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে ফেরিসংকট ও পন্টুনের ভগ্নদশা আর থাকবে না। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এমআইএস/এসএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।