ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বাবার কোলে চড়ে ভোট দিলেন প্রতিবন্ধী হাসান আলী

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৭
বাবার কোলে চড়ে ভোট দিলেন প্রতিবন্ধী হাসান আলী সিলেটের ওসমানীিনগরে বাবার কোলে চড়ে ভোট দিলেন প্রতিবন্ধী হাসান। ছবি: আবু বকর

ওসমানীনগর (সিলেট) থেকে:  টাইফয়েডে হাত-পা অচল। অন্যের সহায়তা ছাড়া চলার সক্ষমতা নেই হাসান আলীর (৩৮)। সেই ষোল বছর বয়স থেকেই তিনি পরনির্ভর। তাই বলে তো ভোট দেওয়ার ইচ্ছে দমানো যায় না। ছেলের সেই আকাঙ্খা একমাত্র জন্মদাতা মা-বাবাই কেবল বুঝেন।

তাই হাসান আলীর ভরসা বাবার কোল। বৃদ্ধ বাবার কোলে বসেই কেন্দ্রে এসে ভোট দিলেন তিনি।

সোমবার (৬ মার্চ) সকাল সোয়া ৯টার দিকে ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ছদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন হাসান আলী।

ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ইচ্ছে পূরণের আনন্দ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে হাসান আলী বলেন, বাবার কারণে আমি ভোট দিতে পেরেছি। প্রায় সব নির্বাচনেই কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারার একমাত্র ভরসা বাবা।

ছেলেকে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে হাসান আলীর বাবা বাংলানিউজকে বলেন, ১৬ বছর বয়সে টাইফয়েডে হাসান অসুস্থ হয়। এরপর হাত-পা অবশ হয়ে যায়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে। প্রায় সকল নির্বাচনে ছেলের আকাঙ্খা থাকে ভোট দেওয়ার। তাই তাকে কোলে করে কেন্দ্রে নিয়ে আসি।

ছদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. সাজিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভোটাররা লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই ভোট দিতে পারছেন।

সকাল থেকে তার কেন্দ্রে সুষ্টভাবে নির্বাচন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ৩ হাজার ৫০৪ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৭৮৫ জন এবং নারী ভোটার ১ হাজার ৭১৯ জন।

ভোট শুরুর পর থেকে ভোটারদের উপস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।     

সোমবার (৬ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে ভোট উৎসব চলছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ উপজেলায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আতাউর রহমান (নৌকা), ময়নুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), শিব্বির আহমদ (লাঙ্গল), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে গয়াছ মিয়া (ধান), ফেরদৌস খান (তালা), ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে মুক্তা পারভিন (নৌকা), মুসলিমা আক্তার চৌধুরী (ধান), শারমিন আক্তার (ফুটবল) ও হুছনা বেগম (কলস)প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সিলেট জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ওসমানীনগর উপজেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় । নবগঠিত এ উপজেলা আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে- তাজপুর, গোয়ালাবাজার, দয়ামীর, বুরঙ্গা, উমরপুর, সাদীপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, উছমানপুর।

উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৫২টি ভোটকেন্দ্রে ৩১৪টি বুথে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। নির্বাচনী দায়িত্বে রয়েছেন ৩১৪ জন সহকারী প্রিসাইডিং ও ৬২৮ জন পোলিং অফিসার। এ উপজেলায় এক লাখ ২৯ হাজার ৮৫৭ ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৪ হাজার ৩৮৭ জন নারী এবং ৬৫ হাজার ৪৭০ জন পুরুষ ভোটার।

ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাচনে সহকারী  রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপজেলা জুড়ে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ো তোলা হয়েছে। প্রতিটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১ জন উপ-পরিদর্শকের (এসআই’) নেতৃত্বে ১২ জন পুলিশ, ২ জন পিসি-এপিসি ও অস্ত্রসহ ১০ জন আনসার থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে ১ জন পরিদর্শকের (এসআই’) নেতৃত্বে ১০ জন পুলিশ, ২ জন পিসি-এপিসি ও অস্ত্রসহ ১০ জন আনসার।

এছাড়াও প্রতি দুই কেন্দ্রের জন্য একটি করে মোবইল টিম এবং প্রতি ৪টি কেন্দ্রের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি রিজার্ভ টিম রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৭
এনইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।