ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

একই গন্তব্যে স্বর্গ ও নরকের পথ!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৭
একই গন্তব্যে স্বর্গ ও নরকের পথ! একই গন্তব্যে স্বর্গ ও নরকের পথ! ছবি: অনিক খান

ত্রিশাল, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ ঘুরে: সরু এক সড়ক। মাত্র ৫ ফুট প্রশস্ত। দু’টি ভারী যানবাহন পাশাপাশি চলাচলেরও জো নেই। বুক উঁচু সড়কের পাশের অংশটি বেশ নিচু। পাকা সড়কের অনেক স্থানে আধাপাকা অবস্থাও নেই। স্থানে স্থানেই পিচ-খোয়া উঠে গেছে। এটি এখন আদল পেয়ে গেছে কাঁচা সড়কের। 

এসব স্থানে ঝড়ো হাওয়ার মতো উড়ছে ধূলোবালি। নাকে-মুখে কাপড় গুঁজে চলতে হয় পথচারীদের।

কোথাও কোথাও আবার সড়ক খোলসটাই পাল্টে ফেলেছে। নিয়েছে এবড়ো-খেবড়ো আকার। ছোট-বড় গর্তও রয়েছে বিভিন্ন স্থানেই। ভোগান্তির এ চিত্র ময়মনসিংহের ত্রিশাল টু গফরগাঁও সড়কের।  

এমন বেহাল সড়ক উজিয়ে প্রতিনিয়তই জেলার ত্রিশাল উপজেলা থেকে গফরগাঁও উপজেলায় পৌছতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও চলাচলকারীদের। তীব্র ঝাঁকুনির ভয় আর নিদারুণ ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই ক্ষতবিক্ষত এ সড়কের বদলে বিকল্প পথে গফরগাঁও থেকে ত্রিশালে আসেন। কেননা গফরগাঁও থেকে ত্রিশাল পর্যন্ত বিকল্প এ সড়কটি মসৃণ ও ঝকঝকে।

এ কারণে জনসাধারণ এখন চলাচলের জন্য এই বিকল্প সড়কটাই ব্যবহার করছেন। এক সড়কের বেহাল অবস্থার বিপরীতে আরেক সড়কের মসৃণ অবস্থাই বলে দিচ্ছে ত্রিশাল আর গফরগাঁওয়ের দু’সংসদ সদস্যের মধ্যকার বাস্তব তফাৎ। সড়কের এ ছবি তুলেছেন অনিক খানস্থানীয় জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই সড়ক আর এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সরকার দলীয় তরুণ সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল।  

আর মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য রাজাকার এম.এ.হান্নান কারান্তরীণ থাকায় কপাল পুড়েছে নিজ এলাকার বাসিন্দাদের।  

সম্প্রতি সরেজমিনে ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও গফরগাঁওয়ের এ দু’টি সড়ক ঘুরে দেখা গেলো এমন বিপরীতমুখি চিত্র।  

ঘুরে দেখা গেলো, ত্রিশাল উপজেলা থেকে বালিপাড়া হয়ে স্থানীয় খান বাহাদুর ইসমাইল সড়ক পেরিয়ে গফরগাঁওয়ে যেতে হয়।  প্রায় ২০ কিলোমিটার এ সড়কের ত্রিশালের বালিপাড়া অংশের চকরামপুর বাজার, বীরামপুর সড়ক একেবারেই ক্ষতবিক্ষত। বিশেষ করে বাহাদুরপুর অংশে পিচঢালাইয়ের কোনো অস্তিত্বই নেই।  

বালিপাড়ার বন্যারপুল অংশের সড়কও একেবারেই বেহাল। এখানে ছোট-বড় গর্ত আর ভাঙা সড়কের কারণে ভ্যান গাড়ি আর সিএনজিচালিত অটো রিকশা ছাড়া অন্য কোনো যান চলাচল করে না। বালিপাড়া রেলস্টেশনের আগে ও পরের অংশও চলাচল অনুপযোগী। সড়কের এ ছবি তুলেছেন অনিক খানস্থানীয় বালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা জুলমত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বালির ট্রাকের কারণেই এ সড়কের সর্বনাশ হয়েছে। কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও ন্যূনতম সংস্কারকাজ করেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা আর নরকের ভেতর দিয়ে চলা যেন এক কথা।  

একই এলাকার সিএনজিচালক আনসার আলী ক্ষোভ ঝাড়েন এভাবে: ‘ত্রিশালের এমপি রাজাকার হওয়ায় কয়েক বছর ধরে কারাগারে আছেন। এমপি ছাড়া একটি এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। ছোট-বড় গর্ত আর পিচ-উঠে যাওয়া সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে গাড়ি চালানোই কঠিন। এছাড়া যন্ত্রাংশও নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কে দেখবে এসব?’ 

স্থানীয়রা জানান, গফরগাঁও বাজার থেকে খান বাহাদুর ইসমাইল সড়ক হয়ে ত্রিশালে আসতে এখন আর কেউ পারতপক্ষে এ সড়ক ব্যবহার করেন না। দুর্ভোগ-দুর্গতি এড়াতে বাধ্য হয়েই তাদের ব্যবহার করতে হয় উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের রৌহা কালিরঘাট আর রসুলপুর হয়ে ত্রিশাল সড়কের।  

সড়কের এ ছবি তুলেছেন অনিক খানগফরগাঁওয়ের সালটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মান্নান পল্টন বাংলানিউজকে বলেন, ‘গফরগাঁওয়ের প্রয়াত রাজনীতিক ও তিনবারের সংসদ সদস্য আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের সময়েই এ সড়কসহ উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই পাকা সড়ক নির্মিত হয়। তারই রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বর্তমান সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের সময়ে পিচঢালা এ সড়কের সংস্কারকাজ হয়। স্থানীয় এ সংসদ সদস্য এলাকার সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। ’ 

‘জনগণকে সন্তুষ্ট রেখেই স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তিনি কাজ করছেন’, বলেন স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবসায়ী ওয়াইজ উদ্দিন মোল্লা।

ত্রিশাল টু গফরগাঁও সড়কের বেহাল ও করুণ দশার বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বালিপাড়া অংশটি বেহাল। এ সড়ক সরু হওয়ায় পাশাপাশি দু’টি গাড়ি চলতে পারে না। গত সমন্বয়সভায় এ নিয়ে কথা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ বিষয়টি দেখবে। ’  

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ সড়কের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললে শিগগির এ সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হবে। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭ 
এমএএএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।