কারণ আগামী বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) থেকে শনিবার (১১ মার্চ) পর্যন্ত একটানা এ অঞ্চলের উপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময় বজ্রসহ ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে।
চলতি সপ্তাহের আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাসে রাজশাহীর আম নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে চাষিদের। বর্তমানে আগাম জাতের গাছে আমের গুটি চলে এসেছে। এছাড়া অধিকাংশ গাছেই রয়েছে মুকুল। এ অবস্থায় ভারী বর্ষণ বা শিলাবৃষ্টি ‘দৈব অভিশাপ’ হয়ে আসবে রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিদের ওপর।
রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের আমচাষি নূরুল আমিন বলেন, এবার হুট করে গরম চলে আসলেও আমের মুকুলের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। দিনে গরম থাকলেও রাতের হালকা ঠাণ্ডা আবহাওয়া আমের মুকুলের জন্য উপকার হয়েছে। আগাম জাতের গাছগুলোতে গুটিও চলে এসেছে।
নুরুল আমিন বলেন, এ অবস্থায় সারাদেশে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে ভারী বর্ষণ বা শিলাবৃষ্টি হয়নি বলে রক্ষে। তবে হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। টানা ভারী বর্ষণ হলে আমের মুকুলে হপার (শোষক) পোকার আক্রমণ হবে। একটি গাছ হপারে আক্রান্ত হলে পুরো আম বাগানই উজাড় হয়ে যাবে। আর শিলাবৃষ্টিতে আমের গুটি ঝড়ে যাবে। এতে মাথায় হাত পড়বে তাদের।
তবে আম চাষিদের উদ্দেশ্যে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আবদুল আউয়াল বাংলানিউজকে বলেন, এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সাধারণত এ মৌসুমে কালবৈশাখীসহ ঝড়বৃষ্টি লেগেই থাকে। এমন আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর এ অঞ্চলের মাটিতে ফসল ফলে। আর সব ফসলেরই কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আমও তার বাইরে নয়।
উপ-পরিচালক আবদুল আউয়াল বলেন, যদি টানা ভারী বর্ষণ হয় তাহলে আমের মুকুলে গুটি বা হপার পোকার আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ম্যানকোজেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমাডোক্লোরিড গ্রুপের দানাদার প্রতিলিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতিলিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
তবে মাত্রা নির্ধারণ ও প্রয়োগের জন্য এর আগে অবশ্যই গাছ দেখিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এজন্য নিকটস্থ থানা, উপজেলা বা জেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে। গাছ পরীক্ষা বা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ছাড়া ওষুধ স্প্রে করা যাবে না বলেও সতর্ক করেন রাজশাহীর ঊর্ধ্বতন এ কৃষি কর্মকর্তা।
এদিকে, রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত রাজশাহীর আবহাওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। তবে চলতি সপ্তাহের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) থেকে পর পর তিনদিন এ অঞ্চলের উপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে। এ সময় দমকা হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত ও ব্যাপক শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় কালবৈশাখীর আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ সময় ভারী বর্ষণ বা শিলাবৃষ্টি শুরু হলেও তা ৩/৪ দিনের বেশি স্থায়ী হবে না। পূর্বাভাসের কথা উল্লেখ করে চলতি সপ্তাহের হালচাল জানান রাজশাহীর এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমের শুরুতে খুবই সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে গত শনিবার (০৪ মার্চ), ভোরে ও রাতে দু’দফা বৃষ্টি হয়।
এতে রাজশাহীতে তারা মোট ১ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭
এসএস/জেডএস