রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে দু’দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: সাইবার অপরাধ, নিরাপদ ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড’ শীর্ষক কর্মশালার প্রথম দিন মঙ্গলবারের (৭ মার্চ) আয়োজনে সংশ্লিষ্টরা এ মতামত তুলে ধরেছেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। ইন্টারনেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন একান্ত প্রয়োজন। সাইবার অপরাধের পেছনে গোটা বিশ্বে প্রতিবছর ৪০০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এজন্য এক ছাতার নিচে এসে সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ডিজিটালের ছোঁয়া পেয়েছি এবং এটি এখন বাস্তবতা। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমান তালে সাইবার নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তায় বিনিয়োগ অর্থনীতিকে আরও মজবুত করবে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, এই বিনিয়োগ আত্মরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে এবং ইন্টারনেটকে নিরাপদ করবে। সব প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ করলে সরকারই লাভবান হবে। এক্ষেত্রে আমরা আরও বিনিয়োগ করতে প্রত্যাশী।
সারাবিশ্বেই সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা প্রত্যেকটা ডিজিটাল সার্ভিস বা ই-কমার্স ইন্ট্রোডিউস করছি, সবক্ষেত্রেই আমাদের সমানতালে অগ্রসর হতে হবে। যারা সাইবার ক্রাইম করছে তাদের থেকে সব সময় একধাপ এগিয়ে থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইছি।
এজন্য আন্তর্জাতিকভাবে একসঙ্গে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, অনলাইনে মানুষ উগ্রবাদে-জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। আমরা একসঙ্গে অনলাইন ক্যাম্পেইন করবো। উগ্রবাদ ও মৌলবাদবিরোধী একটি প্রচারণা দেশব্যাপী একসঙ্গে চালাতে চাই। এর মাধ্যমে যেমন আমাদের সক্ষমতা তৈরি হবে, তেমনি শিশু ও অভিভাবকদের কী কী প্রশিক্ষণ দিতে পারি সে বিষয়ও থাকতে হবে।
পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ‘সেফটি অন দ্য ইন্টারনেট’ সেশনে তারনা হালিম বলেন, আমাদের একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। আমাদের বিভিন্ন সংস্থা সাইবার নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে।
কমনওয়েলথ টেলিযোগাযোগ সংস্থার (সিটিও) উদ্যোগে এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সহযোগিতায় এই আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইন্টারনেটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে তরুণ সমাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জানিয়ে সিটিও’র মহাসচিব শোলা টেইলর বলেন, সাইবার অপরাধ জাতীয় ইস্যু নয়, এটা বৈশ্বিক ইস্যু। বৈশ্বিকভাবেই মোকাবিলা করার জন্য একযোগে কাজ করবে সিটিও।
সিটিও মহাসচিব বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ।
সাইবার ক্রাইম রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার। এজন্য বৈশ্বিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিটিআরসি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।
দু’দিনব্যাপী কর্মশালায় বিভিন্ন সেশন ও প্যানেল আলোচনায় ফেসবুক, ইন্টারপোল, আইটিইউ, জিএসএমএ, কমনওয়েলথ সচিবালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব), বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মোবাইলফোন ও টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের প্রতিনিধি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি’র সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা কর্মশালায় অংশ নিচ্ছেন।
দ্বিতীয় ও শেষদিন বুধবার (৮ মার্চ) ঢাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিশেষ সেশনও অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক এ কর্মশালায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৭
এমআইএইচ/আরআর/এইচএ
**জঙ্গিবাদসহ আপত্তিকর কনটেন্টরোধে ফেসবুকের সঙ্গে বসছে সরকার