জঙ্গি গোষ্ঠীর সংস্পর্শে ছেলে মোস্তফা কামাল হয়েছে ঠিক উল্টো। গ্রামের মানুষ তো বটেই, দেশের মানুষের কাছেও ছেলে হয়েছে নিন্দিত, ধিকৃত।
ছেলের আচার-আচরণে আমূল পরিবর্তন ঘটে গেলেও ঘূনাক্ষরেরও তা ঠাহর করতে পারেননি বাবা মোফাজ্জল বা তার পরিবারের সদস্যরা।
জীবনের গোধূলিবেলায় ছেলের এমন করুণ পরিণতি দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে মোফাজ্জলের হৃদয়। ভয়ানক অপকর্মের জন্য ছেলে কামালের কঠোর শাস্তি হবে এটাই এখন অবধারিত। এখন তা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছেন গ্রামের সহজ-সরল এ কৃষক।
তবে বারবার আকুতি জানিয়েছেন, তার ছেলেকে যারা জঙ্গি বানিয়েছে নেপথ্যের সেই কুশীলবরা যেন পার পেয়ে না যায়। তাদেরও যেন আনা হয় বিচারের আওতায়।
মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) বিকেলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই অকপটে নিজের এই মনোভাব তুলে ধরেন মোফাজ্জল হোসেন।
এ সময় তার সঙ্গে দু’ ছেলে আব্দুল মোতালেব (২৪) ও শরীফুল ইসলাম (১৮) ছিলেন। তারাও বাবা’র মতো একই রকম দাবি উচ্চারণ করেন।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পূর্ব পাগুলী গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন। কৃষিকাজ করেই মাদ্রাসা পড়ুয়া সন্তান মোস্তফা কামালকে পড়াশুনা করাচ্ছিলেন।
তিনি জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই নম্র-ভদ্র ছিল কামাল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। কিন্তু নরসিংদীর শেখের চরের জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময়েই হঠাৎ তার আচরণে পরিবর্তন আসে। বাড়িতে যাতায়াত কমিয়ে দেয়। সবশেষ বাড়িতে আসার কথা বলেও আর আসেনি। ’
হাহাকারভরা কন্ঠে মোফাজ্জল বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমি অসুস্থ। নিজে ওষুধ না কিনে টাকা জমিয়ে কামালকে প্রতি মাসে পাঠাতাম। কে জানতো, আমার ছেলে মানুষ না হয়ে জঙ্গি হবে। সমাজের শত্রু হয়ে উঠবে! আমি একজন জঙ্গির বাবা--- এ পরিচয়টাই আমার জন্য সবচে অভিশাপ। আমার ছেলেকে যারা জঙ্গি বানিয়েছে তাদের বিচার চাই। ’
বলতে থাকেন মোফাজ্জ্বল, ‘আগে ভাবতাম আমি মারা গেলে আমার হাফেজ ছেলে আমার জানাজা পড়াবে। কবরে মাটি দেবে। আমি ভুল ভেবেছি। আমার ছেলে ধ্বংস হয়ে গেছে। ’
‘আপনার ছেলের বিপদগামী হবার পেছনে জড়িত কারা?-- এই প্রশ্নের জবাবে সহজ-সরল এ মানুষটি বলেন, ‘নরসিংদীর মাদ্রাসার শিক্ষকরাই এটা জানেন। ’
এবার পাল্টা প্রশ্ন এ-বয়োবৃদ্ধের: ‘ তাদের (মাদ্রাসার শিক্ষকদের) সামনে আমার ছেলে ধ্বংসের পথে পা বাড়ালো কীভাবে!”
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মোস্তফা কামালের পরিবারের সদস্যরা সহজ-সরল। কামাল ছুটিতে বাড়িতে এসে কখনো তাদের মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলেনি।
নরসিংদীর মাদ্রাসা-শিক্ষকরা জড়িত থাকতে পারেন, কামালের বাবার এমন সন্দেহ প্রসঙ্গে এসপি বলেন, ‘নরসিংদী জেলা পুলিশ এটি বলতে পারবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘন্টা, মার্চ ০৭, ২০১৭
এমএএএম/জেএম