আর তাদের পাল্টাপাল্টি দ্বন্দ্বের বলি হয়ে পড়েছেন উপভোগীরা। দ্বন্দ্বের কারণে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় আসা প্রথম পর্যায়ের ৪০ দিনের ১৫ লাখ টাকা ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ঘটনা এটি। নির্বাচনের পর শপথ নিয়ে চেয়ারে বসার পর থেকেই চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে নানামুখি দ্বন্দ্বের শুরু। বর্তমানে তাদের মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্ক বিরাজ করছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছেন না। মূলত নিজ নিজ স্বার্থের কারণে এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়সূত্র জানায়, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় মোট ১ হাজার ৮শ’ ৩০জন উপকারভোগীর বিপরীতে এ উপজেলায় ১ কোটি ৩০ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।
এর মধ্যে ১শ’ ৭৩জন উপকারভোগীর অনুকূলে ১৫ লাখ ৯ হাজার ২০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় শাহবন্দেগী ইউনিয়নে। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি মার্চ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ৪০ দিনের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এখনো প্রকল্প তৈরি করেননি সংশ্লিষ্টরা। তাই নিয়ম মেনে উক্ত প্রকল্পের টাকা ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আব্দুল হামিদ, মর্জিনা খাতুন, মমতাজ উদ্দিন, সোলায়মান আলী, শরিফা বেগমসহ একাধিক উপকারভোগী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। টানাটানির সংসার। দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হয়। অনেক সময় অন্যের বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে হয়।
‘অথচ চেয়ারম্যান-মেম্বাররা নিজের স্বার্থ নিয়ে টানাটানি করছেন। আর তার বলি বানাচ্ছেন আমাদের মত অসহায় মানুষদের। এ কারণে বরাদ্দ আসার পরও আমরা কাজ করতে পারলাম না। তাদের দ্বন্দ্বে আমরা প্রাপ্য কাজ ও পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হলাম। ’
এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব উপকারভোগীরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শামছুন্নাহার শিউলি বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্প তৈরী করে দেওয়ার জন্য বারবার চেয়ারম্যানসহ মেম্বারদের বলা হয়েছে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি করতে পারেননি।
তাই উপকারভোগীদের নামে আসা বরাদ্দকৃত উক্ত পরিমান টাকা ফেরত পাঠানো ছাড়া সামনে আপতত কোন পথ খোলা নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
শাহবন্দেগী ইউনিয়নের মেম্বার মাহমুদুল হাসান লিটন বাংলানিউজকে বলেন, ‘তিনিসহ অন্য মেম্বাররা কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির সাথে নেই। এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। বরং চেয়ারম্যানই নিয়মিতভাবে পরিষদে আসেন না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন না। এতে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষজনও ক্ষিপ্ত। সবকিছুই চলে তার মর্জিমাফিক। এ কারণে প্রকল্প তৈরি করা যায়নি। তাই স্বভাবত তা বাস্তবায়নেরও কোন সুযোগ নেই। ’।
এদিকে চেয়ারম্যান আল আমিন মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি অনিয়ম-দুর্নীতি করি না। মেম্বাররা করুক সেই সুযোগও আমি দিতে পারি না। প্রকল্প এলেই অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা আঁটেন মেম্বাররা। তাদের এসব অপকর্মের সুযোগ না দেওয়ায় তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ। একজোট হয়ে তারা আমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ’
তিনি আরো বলেন, ‘মেম্বারদের অসযোগিতার কারণে অনেক উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তাদের কাছে ধনী-গরীব বলে কিছুই নেই। সবকিছুতেই ভাগ বসাতে চান তারা। এসব কারণে সময়মত উক্ত প্রকল্প তৈরি করা যায়নি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম