ঢাকা, সোমবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলানিউজকে জাবি ভিসি

নারীর বড় প্রতিবন্ধকতা সাহসের অভাব

নুর আলম হিমেল, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৭
নারীর বড় প্রতিবন্ধকতা সাহসের অভাব জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। ছবি: বাংলানিউজ

জাবি: কোন কিছু পরিবর্তন করতে হলে চাই সাহস, সঙ্গে দৃঢ়তা। আর একজন নারী এটা ভাবতে পারে না যে, আমি কিছু করতে পারি। কারণ তার সাহসের অভাব। আর এটাই তার সামনের দিকে অগ্রসরে সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা।

এ মন্তব্য বাংলাদেশের প্রথম নারী উপাচার্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের। নারী দিবস উপলক্ষে বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় নারী দিবসে সাহসের সঙ্গে নারীদের সব বাধা মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান ফারজানা ইসলাম।

এ সময় নারীর বর্তমান অবস্থা, নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ, সহিংসতা রোধ করতে করণীয়, বর্তমান আইনের অবস্থা, নারী-দিবসের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়েও সুচিন্তিত মতামত দেন তিনি। বাংলানিউজ পাঠকদের জন্য তার কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো।

বাংলানিউজ: নারী দিবসে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
উপাচার্য: ধন্যবাদ, ভাল আছি।

বাংলানিউজ: দিন দিন নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে এর কারণ কি বলে আপনি মনে করেন?
উপাচার্য: বর্তমানে নারী নিয়ে বিভিন্ন এজেন্সি, মিডিয়া এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে  কাজ করছে। তাদের দেওয়া তথ্যে আমরা জানতে পাই যে, নারীর প্রতি সহিংসতা হচ্ছে। তবে  সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এ বিষয়ে আমার একটু দ্বিমত আছে। কারণ আমরা তো জানি না আমাদের মা-দাদিরা কত বড় সহিংসতার শিকার হত। একটি মেয়ের ৭ বছর বয়সে বিয়ে হত। ১১ বছর বয়সে সন্তান ধারণ করতো, ১২ বছর বয়সে সন্তান প্রসাব করতে গিয়ে মারা যেত। এছাড়া সন্তানের অসুখের কারণে মাকে ৪০ দিন তরকারিতে লবণ না দিয়ে খেতে হত। সন্তান না হলে স্বামী ৩/৪ টা বিয়ে করতো। যৌতুকের বলি হয়ে জীবন দিত হত। তখন এ ধরনের সহিংসতা ছিল। সেই সময়ের  মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারতো না। কিন্তু এখন আমরা বাল্যবিবাহ দিতে চাচ্ছি না, সন্তানদের স্কুলে পড়াচ্ছি। ক্ষেত্রগুলো অনেক বিচিত্র ও ব্যাপ্ত হয়েছে। তবে পুরুষ শাসিত সমাজে নতুন নতুন ভাবে সহিংসতার সূত্রপাত হচ্ছে।

বাংলানিউজ: নারীদের অগ্রগতিতে নানামুখি বাধার জন্য আপনি কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে দায়ী করবেন?
উপাচার্য: পুরুষতান্ত্রিক নয়। পুরুষ প্রধান সমাজ তো অবশ্যই দায়ী। তা ছাড়া সমাজ ব্যবস্থাও অনেক দায়ী। যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হয়ে নারীদের যে মন তৈরি হয়েছে এটা তো সমাজই তৈরি করেছে। তবে সমাজ তো আর অমর অটল নয়। সেজন্য আমরা আশাবাদী। অনেক কিছু বদলেছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছে নারী।

বাংলানিউজ: আপাত দৃষ্টিতে নারীর উন্নতি লক্ষ্য করলেও কি তারা মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে?
উপাচার্য: যুগ যুগ ধরে নির্যাতন আর নিষ্পেষণের শিকার হলেও বর্তমানে নারীরা সাহসী হতে পেরেছে। উদাহারণ স্বরুপ তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাহসে আমরা সাহসী হয়েছি। আমরাও সাহস করে অনেক কিছু করতে চাই এবং করেছি। তারপরেও কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমাদের পথটা আমাদের নিচের মত করে তৈরি করে নিতে হয়েছে। তাই সাহসের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার যেমন প্রয়োজন পড়েছে, একই সঙ্গে চেষ্টা ও নিষ্ঠা থাকতে হয়েছে। আর আমি কি করবো এজন্য প্রবল ইচ্ছে শক্তিকে বাদ দিলে চলবে না।

বাংলানিউজ: আইন থাকা সত্ত্বেও কেন নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে?
উপাচার্য: আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমেই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সম্ভব। দেশে আইন আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। গ্রামে এখন বিকল্প আইন হিসেবে গ্রাম্য সালিশী আইন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় ছোট-খাটো বিচারগুলো করা হচ্ছে। কিন্তু যখন ফৌজদারি মামলার জন্য কোর্টে আসতে হয়, তখনি দেখা যায় আইনের ধীর গতি। এই আইনি ধীরগতি দূর করার জন্য চাপ প্রযোগ করতে হবে।

বাংলানিউজ: একটি নির্দিষ্ট দিনকে কেন্দ্র করে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
উপাচার্য: এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বিশ্বে নারী অবহেলিত। এই দিনটি যাদের কারণে এলো তাদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, একই সঙ্গে যে উদ্দেশ্যে দিনটিকে আমরা স্মরণ করি তা নারীদের নানামুখি বাধা প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণেরর সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগায়। এছাড়া সব মানুষের মধ্যে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বৃদ্ধি পায়।

বাংলানিউজ: সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী কি নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী?
উপাচার্য: অবশ্যই। একটি মেয়ে ও ছেলে যখন এক মাঠে খেলতে যায়, তখন তার দিকে সমাজ আঙ্গুল উঠিয়ে বলে, ওকে ঘরের মধ্যে বন্দি করো। পায়জামা পরাও, ওড়না পরাও। কিন্তু একটি সাধারণ ছেলেকে তো বলা হয় না তাকে পাঞ্জাবি পরাও, মাথায় টুপি পরাও। এবার দেখলাম, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য যে টেক্সবুক তৈরি করা হয়েছে তাতে লেখা ‘ ও তে ওড়না’। এগুলো কারা করছে! একটি মেয়ে ছোটবেলা থেকে যে আঘাত ও শাসনে বড় হচ্ছে, সেটাতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ কারণে সে মেপে মেপে কথা বলছে ও কাজ করছে। তবে ইদানিং অনেক এজেন্সি প্রতিষ্ঠান নারীদের উৎসাহিত করছে। সাহসী, অপরাজিতা, বিজেতা, জয়ীতা ইত্যাদি উপাধি দেওয়া হচ্ছে। যা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাংলানিউজ: নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আমাদের করণীয় কি?
উপাচার্য: বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতিতে সহিংসতার সূত্রপাত হচ্ছে। এই সূত্রপাত যদি আমরা কমাতে চাই, তাহলে আমাদের এক যোগে রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া গতিশীল করতে হবে, বিচারিক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হবে, নারীদের পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে হবে, শিক্ষার সহায়তা  দিতে হবে। রাষ্ট্রকে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলানিউজ: নারী দিবসে আপনার প্রত্যাশা?
উপাচার্য: সব সময়ে আমি যে আশাটি করি, নারী ও পুরুষ উভয় যেন ধীরে ধীরে এই বাংলাদেশে মানুষ হয়ে উঠে। মানবিকতা সব থেকে বড়। যেখানে যতটা প্রয়োজন সেখাতে তাই যেন পায়। নারী পুরুষ এক হয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়বে। সেখানে কোন সমতা ভেদাভেদ থাকবে না।

বাংলানিউজ: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ
উপাচার্য: বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।