বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) সন্ধ্যায় দশম জাতীয় সংসদের ৩৭তম কার্যদিবসে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক বলে শুধু উন্নয়ন করলে হবে, গণতন্ত্র লাগবে।
তিনি বলেন, কোনোমতে আমাকে দুর্নীতিবাজ বানিয়ে একবার জেলখানায় যাই কিনা সে চেষ্টা করা হলো, তখন তারা এতো গণতন্ত্র চারিদিকে দেখলো? দেশে ইমার্জেন্সি, সারা বাংলাদেশে মিলিটারি ডিপ্লয় করা, ওনাদের জন্য যা খুব গণতান্ত্রিক পরিবেশ। কারণ তারা ভাবলেন একটা অস্বাভাবিক পাওয়ার যদি পাওয়া যায় তাহলে ওনার একটু গুরুত্ব বাড়তে পারে। একটা মন্ত্রী বা পতাকা পেতে পারেন। এটাই ওনাদের আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষা যদি এটাই হয় তাহলে রাজনীতি করলেই হয়, জনগণের কাছে গেলে হয়। নির্বাচন করবেন জনগণ ভোট দেবে। ভোটে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে আসবেন। সেখানে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতায় দখলদারদের সঙ্গে খাতির। তারা থাকলে গণতন্ত্র।
আর এখন একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশই যদি না থাকে, কথা বলার স্বাধীনতাই যদি না থাকে তাহলে তারা এতো কথা বলেন কিভাবে? তারা এভাবে সরকারের সমালোচনা করে কিভাবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর বাংলাদেশে কিন্তু প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। একমাত্র বিটিভি ছিল। একটাই রেডিও ছিল। এই আমি শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান হিসেবে প্রথম প্রাইভেট টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দেই। বিভিন্ন চ্যানেল দিয়ে দেই। আজকে আমি চ্যানেল দিয়েছি বলেই কথার বলারও সুযোগ পাচ্ছেন আর সমালোচনা করতে পারছেন।
গণতন্ত্র আছে বলেই তো উন্নয়ন হচ্ছে। আজকে আমরা গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনা করছি বলেই তো দেশের উন্নয়নটা হচ্ছে। আমাদের পূর্বে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল। কই তখন এতো উন্নয়ন হয়নি কেন? আমরা আট বছরে যা করতে পারলাম। আমার অতীতে যারা ছিল তারা পারেনি কেন? সেটা আমার প্রশ্ন? সেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে, যদি সমালোচনা করতে হয়। তারা পারলো না, আমরা পারি কেন? আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। প্রতিটি কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করি; যা কিছু করি জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে; নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে না।
জঙ্গি দমন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম নিরীহ মানুষকে হত্যা সমর্থন করে না। মানুষ জঙ্গি-সন্ত্রাস করবে কেনো? মানুষকে হত্যা করবে কেনো? ইসলামতো মানুষ হত্যা করতে বলেনি। কিন্তু ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েরা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেই। কোনোমতেই সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেবো না, যেকোনো মূল্যে যেকোনো ভাবে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমন করবো।
দারিদ্র্য বিমোচনে গৃহিত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দারিদ্র বিমোচনের জন্য ১৪২টি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংকসহ আড়াই হাজারের মতো এনজিও রয়েছে। তারাও নাকি দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য কাজ করে।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে নাকি দারিদ্র্যমুক্ত করে, ব্র্যাকও ১ শতাংশ করে। ব্র্যাক কাজ শুরু করেছে ১৯৭২ সাল থেকে আর গ্রামীণ ব্যাংক কাজ শুরু করেছে ১৯৮৫ সাল থেকে। তারা যদি দুই শতাংশ হারে প্রতি বছর দারিদ্র্যহ্রাস করে থাকে তাহলে অনেক আগেই দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার কথা, বাংলাদেশে দারিদ্র্য থাকতোই না। দারিদ্র্য একেবারে শূন্যের কোটায় যাওয়া উচিত ছিলো। তাহলে দারিদ্র্য গেল না কেনো? এটা গবেষণা করে দেখা দরকার, কোন সরকারের সময় দারিদ্র্য কত শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আমাদের গৃহিত পদক্ষেপগুলোর ফলে গত ৮ বছরে ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্য বিত্তে উঠে এসেছে।
**জনগণ আমাদের ভোট দেবে কি করে, প্রশ্ন রওশনের
** রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় রেকর্ড গড়লো দশম সংসদ
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৭
এসএম/এসকে/জেডএস