ঢাকা, সোমবার, ২০ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মাদকের অবাধ রুট বদরপুর সীমান্ত

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
মাদকের অবাধ রুট বদরপুর সীমান্ত মাদকের অবাধ রুট বদরপুর সীমান্ত

ফেনী: দীর্ঘদিন ধরেই মাদকের নিরাপদ আখড়া হয়ে উঠেছে ফুলগাজীর বদরপুর। নোম্যান্সল্যান্ডে খানাবাড়ী এলাকাটি হলো ভারত সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে মাদক ও নিষিদ্ধ সামগ্রী ঢোকার নিরাপদ রুট। শুধু মাদক নয় এ স্পট দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশও ঘটে অহরহ। 

বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) সরেজমিন পরিদর্শনে বাংলানিউজকে এমন তথ্যই পায়। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা এ বিষয়ে কথা বলেন।

এর আগে বুধবার ওই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকালে ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় নওশের আলী নামের এক আনছার সদস্য নিহত হন । ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন ফেনী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সোহেল রানা।  

বাংলানিউজের কথা হয় সোহেল রানার সঙ্গেও। তিনি বলেন, এ এলাকা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ঢুকছে বাংলাদেশে। সে তথ্য রয়েছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও। গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের আলোকেই ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।  

স্থানীয় এক প্রবীণ বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই পথে মাদক ঢুকছে... বিষয়টি স্থানীয় জন প্রতিনিধিসহ উর্ধ্বতনদেও জানালেও কোন প্রতিকার মেলেনি। স্থানীয়দের ধারণা এ মাদক ব্যবসার সাথে উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারাও জড়িত।  

তারা অভিযোগ করেন, সীমান্তে দায়িত্বে থাকা অসাধু বিএসএফ ও বিজিবি কর্মীরাও এ জন্য দায়ী। তাদের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে এই স্থান দিয়ে দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদক দ্রব্য বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
  
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলেই সীমান্তের এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কেউ এখানেই বসে মাদক সেবন করে আবার কেউ তা নিয়ে যায়।  

ফেনীস্থ -০৪ বিজিবি ক্যাম্পের অধিনায়ক লে: কর্ণেল কামরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, বদরপুর গ্রামের সীমান্তঘেঁষা ‘খানাবাড়ী’ দিয়ে অবাধে মাদক ঢুকছে এমন তথ্য বিজিবির কাছে আসে। খবরট পেয়ে তিনি এক রাত সেখানে অবস্থান করেন।  
কামরুল বলেন, বাড়িটি এমন স্থানে যার কিছু অংশ ভারতের মধ্যেও পড়েছে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনের কারণে ইচ্ছে করলেই এখানে অভিযান চালানো যায় না।  

স্থানীয় এলাকাবসীরা মনে করছে ওই এলাকা থেকে যদি বাড়িটি সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে ফুলগাজী উপজেলা দিয়ে মাদক ঢোকা একদমই কমে যেত।  

ফুলগাজী উপজেলা  চেয়ারম্যান আবদুল আলীম বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবসী অভিযোগ করে আসছে খানাবাড়ি এলাকা দিয়ে মাদক ঢুকছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে সজাগ থাকলেও বাড়ীটি ভারতের অংশে পড়ায় অভিযান সম্ভব হয়না।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে ফুলগাজী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বদরপুর গ্রামের মাদক আস্তানায় অভিযান চালান ফেনীর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা। এসময় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে হাতে নাতে ধরেও ফেলেন তিনি। এক পর্যায়ে মাদক বিক্রেতারা সংজ্ঞবদ্ধ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপর হামলা চালায়। পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে নওশের আলী নামে এক আনসার সদস্য নিহত হন, সুমন নামে আরেকজন নিখোঁজ হন। তিনি বর্তমানে ত্রিপুরার কারাগারে রয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময় ০৮৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৭
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।