অথচ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে,‘সড়ক পরিবহন আইনে সিটিং বলে কোন সার্ভিস নেই। যারা সিটিংয়ের কথা বলে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগারগাঁও থেকে আব্দুল্লাহপুর এ/১৮৪ রুটে জাবালে নুর, আসাদ গেট থেকে আব্দুল্লাহপুর রুটে প্রজাপতি; মিরপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর রুটে বসুমতি, মধুমতি; মিরপুর থেকে কুড়িল হয়ে বাড্ডাসহ অন্যান্য রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর, আকিক, নূরে মক্কা, অছিম সহ রাজধানীর সব রুটেই সিটিং সার্ভিসের নামে চলা গাড়িগুলোতে নেয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
‘ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে জাবালে নুর বাসের কন্ডাক্টর জানান, ‘ভাই এটা হলো সিটিং বাস। এখান থেকে খিলক্ষেত গেলেও ৩০ টাকা আব্দুল্লাহপুর গেলেও ৩০ টাকা। মালিক যা ভাড়া নির্ধারণ করে দিচ্ছে আমরা তাই নিই। এর বেশি নিই না। ’
অথচ ভাড়া বেশি নেয়া হলেও লোকাল বাসের মতই রাস্তা থেকে বেপরোয়া যাত্রী তুলছে এসব বাসের হেলপার কন্ডাক্টররা। প্রতিবাদ করলেই যাত্রীদের সঙ্গে করা হচ্ছে খারাপ ব্যবহার। অনেক সময় করা হচ্ছে মারধরও। এসব গাড়ির মালিক-শ্রমিক সিন্ডিকেটের কাছে সাধারণ যাত্রীরা অসহায়।
এমনকি অরাজকতা দেখা গেছে স্বয়ং সরকারি বাস সার্ভিস বিআরটিসিতেও। গুলিস্তান থেকে হামিদ বিশ্বাস উঠেছেন দোতলা বাসে, যাবেন গাবতলী। কন্ডাক্টর তার কাছ থেকে ৩০ টাকা ভাড়া দাবি করে। বেশি কেন জানতে চাইলে? প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার দাবি, ‘চার্টে এমনটাই দেয়া আছে’। যখন শক্তভাবে বলা হলো চার্টে সঠিক ভাড়া ১৯ টাকা, তখন বাধ্য হয়েই বাকি টাকা ফেরত দেয় সে।
এর পাশাপাশি রাজধানীতে চলাচলকারী লোকাল রুটের বাসগুলোও রাতারাতি সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। তারাও সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া।
সদরঘাট থেকে উত্তরা রুটের লোকাল বাস খ্যাত সুপ্রভাত রাতারাতি সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়ে গলা কাটছে সাধারণ যাত্রীদের। গাজীপুর টু আজিমপুর রুটে চলাচলকারী বাস ভিআইপি ২৭ এর বিশ্বরোড থেকে আজিমপুর পর্যন্ত সাধারণ ভাড়া ১৫ টাকা। অথচ সিটিং সার্ভিসের নামে বাসটি যাত্রীদের থেকে ৪০ টাকা ভাড়া আদায় করেই চলেছে।
কথা হয় ৮ নম্বর রুটের (গাবতলী-সায়েদাবাদ) বাস চালক শফিক মিয়ার সাথে। তিনি জানান, বর্তমানে লোকালের পাশাপাশি ৮ নম্বরের ১৫টি সিটিং বাস আছে। তবে শিগগিরই সিটিং সার্ভিসের কাতারে আরো ৪০টি গাড়ি যুক্ত হতে চলেছে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে আব্দুল্লাহপুর রোডের ৩ নাম্বার বাসটি বর্তমানে সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। এভাবেই একে একে সব লোকাল বাসগুলো সিটি সার্ভিসে পরিণত হচ্ছে। আর এসবের পেছনে উদ্দেশ্য একটাই, তাহলো যতটা বেশি সম্ভব সাধারণ যাত্রীদের গলাকাটা।
রাজধানীতে প্রকাশ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অনিয়ম চললেও বিষয়টি নিয়ে দেখার যেন কেউ নেই। গাড়িতে যাত্রীদের কেউ বিষয়গুলোতে প্রতিবাদ করলে তাকে দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হচ্ছে। ফলে সম্মান বাঁচাতে নীরবে যাত্রীরা দিনের পর দিন সহ্য করে চলেছেন এসব অনিয়ম।
আর এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা বলছেন ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে‘।
কিন্তু সেই ‘সুনির্দিষ্ট’ অভিযোগের সংজ্ঞা কী? আর অভিযোগের ভিত্তিতে তারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন সে ব্যাপারে তেমন কিছু জানাতে পারছে না সরকারি নজরদারি সংস্থাটি।
সিটিং সার্ভিসের নামে রাজধানীর পরিবহন খাতের এই বিশৃঙ্খলার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, বিআরটিএ’র সচিব মোহাম্মদ শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে ইতোমধ্যে কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা কয়েকটি বাসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করেছি। তাছাড়া বেশকিছু কার্যক্রম হাতে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ’
তবে সিটিং সার্ভিসের নামে কবে এই বেপরোয়া জুলুমের অবসান হবে তা নিয়ে সন্দিহান সাধারণ যাত্রীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
এএম/আরআই