ঢাকা, সোমবার, ২০ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, আতঙ্কে মালিবাগবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, আতঙ্কে মালিবাগবাসী নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের পিলার বা গার্ডারের ভাঙা অংশ/ছবি ও ভিডিও: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আতঙ্কিত মালিবাগবাসী। আতঙ্ক শুধু তাদেরই নয়, আশাপাশ এলাকা এবং চলাচলকারী সবার মাঝেই।

রাজধানী ঢাকার মালিবাগ রেলগেট এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের পিলার বা গার্ডার ভেঙে পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন।

তারপর থেকেই এ আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না মানুষের।

দুর্ঘটনার পর আশপাশের লোকজনের চিৎকার-আহাজারীর পর হতাহতদের উদ্ধার করা হলেও রাস্তায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে থাকে। যার দেখা মেলে সময় গড়িয়ে বিকেলেও।

সকালে শত শত মানুষের ভিড় জমে ফ্লাইওভারের কাছে। তারা বিচার দাবি করেন, ক্ষোভ প্রকাশে বলেন, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। বিকেলে লোক জড়ো হয়ে সেই ভিড় না দেখা গেলেও, পাশ দিয়ে হেঁটে বা গাড়িতে যাওয়া মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
রক্তের দাগ এখনও লেগে আছে ইট-পাথরে, ছবি: তুলিস্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই এলাকা কাজ শুরুর পর থেকেই হয়ে যায় মানুষ ও যান চলাচলের অনুপযোগী। এছাড়া এখানে প্রায় ৫শ’ বেশি দোকান রযেছে। ধীর নির্মাণ কাজের ফলে দোকানদারদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। একইসঙ্গে প্রচণ্ড ধুলার কারণে রাস্তায় চলাচলকারী ও স্থানীয়দের শ্বাস-প্রশ্বাসেও অনেক সমস্যা হচ্ছে।

সেখানকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবে ধীর গতি আর বিশৃঙ্খলায় কাজ হচ্ছে তাতে কোনো ভরসা নেই। দুর্ঘটনায় এই ভরসা কমে শঙ্কায় রূপ নিয়েছে।

গতরাতের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আনুমানিক দেড়টার দিকে প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। পরে বাইরে বেরিয়ে দেখি পিলার বা গার্ডার ভেঙে পড়েছে। আহতদের আহাজরী শুনে রেলগেটে এসে দেখি গার্ডারের নিচে মানুষ চাপা পড়ে আছেন। তাদের চিৎকার শুনলেও কিছুই করার ছিল না আমাদের। পরে ক্রেন এনে গার্ডার উঠিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরমধ্যে একজন মারা গেছেন।
 
স্থানীয় বাসিন্দা শাহাদাত বলেন, ভয়ে আমি কখনও এই গার্ডারের নিচ দিয়ে হাঁটি না। সবসময় আতঙ্কে থাকি।
 
রেল গেটের বাসিন্দা আমির ও মোমেনের অভিযোগ, তমা কনস্ট্রাকশন ও দায়িত্বশীল সরকারি প্রশাসনের অবহেলার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটলো।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ ধরনের দুর্ঘটনা আবারও ঘটার শঙ্কা রয়েছে। তাদের দাবি, এখানে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত। এছাড়া এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের উচিত তদন্ত করে তা প্রকাশ করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।

রেলগেট দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন মোবারক হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই ঘটনটা জানার পর গা ছমছম করছে। কিন্তু এখানে দোকান থাকার করণেই আমাকে প্রতিদিনই আসতে হবে।

রোববার (১৩ মার্চ) দিনগত রাত সোয়া ২টার দিকে মালিবাগ রেলগেট সংলগ্ন ফ্লাইওভারের একটি ‘গার্ডার’ ক্রেন দিয়ে তুলতে গিয়ে নিচে ছিটকে পড়ায় স্বপন নামে এক পথচারী (৪৩) নিহত হন। পা হারিয়েছেন এক প্রকৌশলী ও আরেক পথচারী। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আহতদের মধ্যে একজন তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকৌশলী পলাশ ও পথচারীর নাম নুরুন্নবী (৪০)। দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বে ছিলেন প্রকৌশলী পলাশ।

এলাকাবাসীর দাবির পর ঘটনা তদন্তে সোমবার দুপুরে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মেয়র এলাকবাসীর অভিযোগ শুনেন, ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
আরএটি/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।