ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রেলওয়ের ভেতরে-বাইরে অবাধে ধূমপান চলছেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
রেলওয়ের ভেতরে-বাইরে অবাধে ধূমপান চলছেই রেলওয়ের ভেতরে-বাইরে অবাধে ধূমপান চলছেই। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলগাড়ির ভেতরে-বাইরে এখন ধূমপান চলে। কিছুদিন আগে ট্রেন থামিয়ে রেলওয়ের এক চালক সিগারেট কিনেছিলেন। রাজধানীর দুই রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, ধোঁয়া উড়ছে এক প্লাটফর্ম থেকে আরেক প্লাটফর্মে।  ট্রেনের গায়ে বা রেলস্টেশনে ‘ধূমপানমু্ক্ত’ লেখা স্টিকার লাগানো থাকলেও বাস্তবে রেলওয়ের ভেতরে-বাইরে ধূমপানের এমন দৃশ্য হরহামেশা দেখ‍া যাচ্ছে।

আর ধূমপানের জন্য দূরে কোথাও যেতে হয় না! প্লাটফর্মের ভেতরেই মিলে যাচ্ছে সিগারেট। রেলের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে অস্থায়ী অনেক দোকানেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে সিগারেট।

এমনকি স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের ভেতরে সিগারেটের খোসা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। রেলের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও সিগারেটে পরম আয়েশে সুখটান দিয়ে স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  

এ ‍অবস্থায় যেসব সাধারণ যাত্রী ধূমপানে বিরক্ত, তারা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না। রেলস্টেশনের সর্বত্রই চলছে ধূমপানের অত্যাচার।

সোমবার (১৩ মার্চ) সকালেই ঢাকা বিমানবন্দর ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে সরাসরি এ চিত্র দেখা গেছে।  
 
প্রকাশ্যে ধূমপান করেছেন খোদ রেলওয়ে নিরাপত্তা পুলিশ (জিআরপি) ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কর্মকর্তারা।  

জানতে চাইলে তারা জানান, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়েই রেলস্টেশনে ধূমপান চলে।  
আর স্টেশন কৃর্তপক্ষের বক্তব্য- ‘তারা এ দুই বাহিনীকে চিঠি দিয়েছেন। এর বাইরে তারা ধূমপায়ীদের পেছনে দৌড়াতে পারেন না। ’ 
 
আরএনবির চিফ ইন্সপেক্টর মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিগারেট নিয়ে হকার দেখলেই আমরা বের করে দিই। এর বেশি সাজা দিতে পারি না। আর সিগারেট নিয়ে হকাররা ট্রেনে আসে, ট্রনে চলে যায়। ’ 
রেলওয়ের ভেতরে-বাইরে অবাধে ধূমপান চলছেই।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমআরএনবির এই কর্মকর্তা আবার যাত্রীদের ওপর দোষ চাপিয়ে বলেন, দেখা যায় যাত্রীসাধারণও ধুমপান করেন।

 
কিন্ত স্টেশনে উপস্থিত হয়ে ধারণ করা একটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, তার বাহিনীর লোকজনের হাতেই সিগারেট। আর যেসব হকার সিগারেট নিয়ে ঢুকেছে তারা বলছে, কেউ তাদের ঢুকতে বাধা দেয়নি।
 
বিমানবন্দর স্টেশনের প্লাটফর্মে ধূমপান করতে দেখা গেছে স্কুলছাত্রকেও। আর যাত্রীর সিগারেটের আগুন থেকে নিজের সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে সুখটান দিচ্ছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য--- এমনটাও ধরা পড়েছে মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে।  
 
আর কমলাপুর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে দায়িত্বরত দুই আরএনবি সদস্যের সামনেই বিক্রি হচ্ছিল সিগারেট।
 
বিমানবন্দর রেলস্টেশনের ৪ নম্বর প্লাটফর্মের পাশে যে কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে, তার ভেতরেও সিগারেটের শেষাংশ ফেলে রাখা দেখা গেছে।
 
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই দুই স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে এখন ধূমপানের ওপর বিধি নিষেধটি শুধু খাতায় লেখা। কিন্তু এটি কার্যকরে কেউই নেই।  
রেলওয়ের ভেতরে-বাইরে অবাধে ধূমপান চলছেই।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমতবে আরএনবির উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, স্টেশনে ধূমপানবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা তাদের কাজ নয়। এটা পুলিশের ওপর ন্যস্ত। কিন্ত পুলিশ এটা করে না।  

জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে থানাপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসিন ফারুক বলেন, পুলিশ সিগারেট বিক্রি করতে দেখলেই অভিযান চালাবে। তারা সক্রিয় রয়েছেন।

কিন্তু কমলাপুর রেলস্টেশনের ভেতরে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও এ নিয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।  

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রেলস্টেশনের ভেতরে হকার ও সিগারেট বিক্রি বন্ধে তারা আরএনবিকে চিঠি দিয়েছেন। এর বাইরে আর তাদের করণীয় নেই।  

‘আমরা তো দৌড়াতে পারবো না। আমরা দেখে বলি। ভ্রাম্যমান কিছু হকার আছে যারা ট্রেনে চড়ে আসে, আবার ট্রেনে চড়ে চলে যায়। ’ –বলেন মাহবুবুর রহমান।
 
বাংলাদেশের আইনে প্রকাশ্যে ও গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ। তার ওপর আবার রেলওয়ে আলাদাভাবে ধূমপানকে নিষিদ্ধ ঘোষণাও করেছে।          

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক তিনশত টাকা অর্থদণ্ডে দন্ডিত হবেন। আর এক ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ করলে তিনি এ দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দন্ডিত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
এসএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।