কিন্তু কীভাবে? বাংলানিউজকে তারই গল্প শোনালেন বিএলআরআই’র মহাপরিচালক ড. তালুকদার নূরুন্নাহার।
প্রথমে ‘পিওর’ মীর কাদিম জাতের বেশ কিছু গরু সংগ্রহ করে তার ভেতর থেকে আবার উৎকৃষ্ট মানের ষাঁড় ও গাভী বাছাই করা হয়।
এভাবেই মীর কাদিম জাতের গরুর সম্ভাবনার কথা বলছিলেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রথম এই নারী মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, এই জাতের গরু সহিষ্ণু, এর উৎপাদনশীলতা অতুলনীয়। অন্য দেশি জাতের গাভী থেকে যেখানে ৫ থেকে ৮টি বাচ্চা পাওয়া যায় সেখানে এই জাতের গাভী থেকে বাচ্চা মেলে ১৪ থেকে ১৬টি।
এভাবে দ্বিগুণ উৎপাদনশীলতা আমাদের দ্রুত সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারবে। দেশের পুষ্টি আর আমিষের ঘাটতি পূরণে অসাধারণ ভূমিকা রাখবে-- যোগ করেন নূরুন্নাহার।
গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে এই জাতের গরু নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা গবেষণায় জানতে পেরেছি আগের দিনে নওয়াব আর জমিদাররা তাদের সন্তানদের মুখে তুলে দিতেন মীর কাদিম গরুর দুধ।
কেন জানেন? কারণ ওই দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ অনেক বেশি ছিলো। যা শিশুদের মেধা বিকাশের অনন্য উপাদান। আমরা বেশি পরিমাণ দুধের আশায় যেখানে-সেখানে গরুর সংকরায়ন করে মূল ঐতিহ্যই হারিয়ে ফেলেছি। অথচ এই জাতের গরুর যে উৎপাদনশীলতা তা দিয়েই প্রাণিসম্পদ দ্বিগুণ করা যায়- যোগ করেন জাহাঙ্গীর।
মুন্সিগঞ্জের মীর কাদিম গরু দেখতে ধবধবে সাদা। কিছুটা লালচে আর আকর্ষণীয় বাঁকা শিং।
কোরবানির ঈদের বাজারে এই গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে।
রসনাবিলাসে আর কিছু থাকুক বা না থাকুক, কোরবানী ঈদে মীর কাদিমের সাদা গরুর মাংস থাকা চাই খাবার টেবিলে। এটা পুরান ঢাকার অনেকের কাছে রেওয়াজ।
তবে চাহিদার তুলনায় এই জাতের গরুর সরবরাহ কমে গেছে। মুন্সীগঞ্জে এই গরু পালন করা হলেও এ জেলার কোনো হাটে সচরাচর দেখা যায় না।
কেবল এই জাতের গরু নিয়ে কোরবানীর ঈদে একটি পশুর হাট যে বিখ্যাত হতে পারে তার প্রমাণ পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ হাট। তবে চাহিদার তুলনায় আগের মতো মীর কাদিমের গরু আর মিলছে না সেখানেও।
গনি মিয়ার হাট বলে পরিচিত রহমতগঞ্জ মাঠ। সেখানে গরুর কদর যেমন, দামও বেশি। ৮০ হাজার থেকে ৮ লাখ টাকায় মেলে মীর কাদিমের সাদা গরু।
জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা মুন্সিগঞ্জে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করেছি। সাফল্যও এসেছে। এখন প্রয়োজন দেশজুড়ে এই জাতের গরু ছড়িয়ে দেওয়া।
দেশের প্রাণিসম্পদের চিত্র পাল্টে দেওয়ার জন্যে এই জাতের গরুই যথেষ্ট। সব মিলিয়ে মীর কাদিমের গরু কেবল ঐহিত্যের ধারকই নয়, সম্ভাবনা আর উৎকর্ষের বিচারে সর্বোৎকৃষ্ট --বলছিলেন মীর কাদিম গরুর গবেষক প্রাণিবিজ্ঞানী জাহাঙ্গীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
জেডআর/আরআর/জেএম