এর গুরুত্ব বিবেচনায় রেখেই দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ১৪টি দেশের পুলিশ প্রধানদের সম্মতিক্রমে একটি ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। ১৪ দেশের পুলিশপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সব ধরনের সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছেন।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে তিন দিনব্যাপী চিফস অব পুলিশ কনফারেন্স-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ১২ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে তিনদিনব্যাপী এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। ইন্টারপোল এবং বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে ১ম বারের মত এ সম্মেলনের আয়োজিত হয়।
কনফারেন্সে ইন্টারপোল মহাসচিবসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১৪টি দেশ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পুলিশপ্রধানগণ অংশ গ্রহণ করেন।
তিনদিনের এ সম্মেলনে ১৪টি কর্ম অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা জঙ্গিবাদ দমন, মানবপাচার রোধ, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন রোধ, মাদক পাচার রোধ, অবৈধ অস্ত্র-চোরাচালান প্রতিরোধ, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করেন।
২য় দিন: ১৩ মার্চ (সোমবার)
তিনদিন ব্যাপী এই কনফারেন্সের ২য় দিনে বাংলাদেশ পুলিশের মাহপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ইন্টারপোল মহাসচিব ড. ইয়ুর্গেন স্টকসহ (Dr. Jurgen Stock) বিভিন্ন দেশের পুলিশপ্রধান এবং সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ইন্টারপোল মহাসচিবের সাথে আইজিপি আলোচনা করেন। এছাড়া, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পলাতক আসামিদের ফেরত আনার বিষয়েও আলোচনা হয়।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দেওয়া, বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিরাপত্তা বিধান, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত প্রবাসীদের চিহ্নিতকরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করার বিষয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা হয়।
মিয়ানমারের চিফ অব জেনারেল স্টাফের সঙ্গে মাদক চোরাচালান (ইয়াবা) বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে দু’দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। ইয়াবার চোরাচালান বন্ধে মিয়ানমার বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বলেও আশ্বাস দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে সকল ধরনের সহায়তর আশ্বাস দেন শ্রীলংকার পুলিশ প্রধান।
দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের পুলিশপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় গোয়েন্দাতথ্য আদানপ্রদান, সাইবার অপরাধ, অর্থনৈতিক অপরাধ, বিশেষায়িত অপরাধ ও ফরেনসিক তদন্ত ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য আরও বেশি প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
আফগানিস্তানের পুলিশপ্রধান বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে তার দেশের পুলিশের প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও পাকিস্তানের সাথে দেশটির সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কেও আলোচনা হয়।
ফেসবুকের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে চেয়েছিল, তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই চুক্তি করে নি। তবে তারা বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে সহায়তা কোর আশ্বাস দিয়েছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১ম দিন: ১২ মার্চ (রোববার)
সম্মেলনের প্রথম দিন দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের বিভিন্ন দিক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও পুলিশ বাহিনীর আপসহীন, কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়। পাশাপালি বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ এবং এই সমস্যা সমাধানের বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম এই ১৪টি দেশের পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করছেন।
এছাড়া ইন্টারপোল, ফেসবুক, ইন্টারপোল গ্লোবাল কমপ্লেক্স ফর ইনোভেশন (আইজিসিআই), যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), আসিয়ানাপোল, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ট্রেনিং অ্যাসিসট্যান্স প্রোগাম (আইসিআইটিএপি)সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সম্মেলনে যোগ দেন।
বাংলাদেশ সময়:...১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
এসজেএ/জেএম