বক্তারা বলেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে এখনই আঁটঘাট বেঁধে নামতে হবে। কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রজন্ম ৭১ আয়োজিত ‘জাগো বিশ্ব: একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দাও’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানান তারা।
প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি শাহীন রেজা নূরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গোল টেবিলি আলোচনায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সরওয়ার আলী, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান এম এ হাসান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন এবং শহীদ পরিবারের সন্তান মেঘনা গুহঠাকুরতা, শমী কায়সার, নুজহাত চৌধুরী, মিজানুর রহমান তালুকদার ও আসিফ মুনীর।
২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে দূতাবাসগুলোর তৎপর হওয়া প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত না নিলে দূতাবাসগুলো সিদ্ধান্ত নেয় না। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দূতাবাসগুলোকে এখন বিভিন্ন দেশ থেকে স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করতে হবে। আমরা একটা ধাপ অতিক্রম করেছি শিগগিরই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, এবার প্রথমবার ২৫ মার্চ দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন করব। একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে বড় পরিসরে গণহত্যা দিবস পালিত হবে।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকারকে কূটনৈতিকভাবে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান গোল টেবিল বৈঠকের বক্তারা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, পাড়া-মহল্লায় আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন কেউ গলা উঁচু করে একাত্তরের গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে। আমাদের এখানে কেউ কেউ গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলে, শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, এতদিন কেউ স্বীকৃতি দিক বা না দিক বাস্তবতা হলো সূর্যের মতো। আমরা তা বাস্তবায়ন করবোই। শুধু হত্যাকাণ্ডই নয়, ৭১-এ জেনোসাইডের সংজ্ঞার সব কিছুই হয়েছে বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিশ্বের কাছে অন্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরই টার্গেট করা হয়নি, টার্গেট করা হয়েছিলো সাধারণ নাগরিকদেরও।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় তার আলোচনায় সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, পাকিস্তানের সময় থেকে ইতিহাসের বিকৃতি হচ্ছে। দেশে-বিদেশে অপপ্রচার রয়েছে। ইতিহাসের খুঁটিনাটি সত্যগুলোও আবার সামনে আনার আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিক শ্যামল দত্ত বলেন, পাকিস্তান গণহত্যা স্বীকার করে না। আমাদের এখানেও কেউ কেউ স্বীকার করে না। একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, এটি মাথায় রেখে এগুতে হবে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশিদ বলেন, আমাদের গণহত্যাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আগে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো যেন গণহত্যার স্বীকৃতি দেয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশকে যেভাবে আগে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো আগে স্বীকৃতি দিয়েছে পরে গোটা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে, জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে; একইভাবে সারা বিশ্বও গণহত্যা দিবসকে স্বীকৃতি দেবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার বলেন, ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবসটিকে জাতীয়ভাবে ভালোভাবে পালন করার মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে অনেকটা এগিয়ে যাবো।
কূটনৈতিক উদ্যোগ এখনই শুরু করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দূতাবাসগুলো কীভাবে কী করবে এখনই সেই পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করতে হবে।
ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা নুজহাত চৌধুরী বলেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সহজ হবে না। এজন্য এখনই আমাদের আঁটঘাট বেঁধে নামতে হবে। আমরা যেন আরেকটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত ও আন্তরিকতার যেন কোনো ঘাটতি না থাকে।
ইংরেজি ভাষায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে বলে অভিমত দেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭/আপেডেট: ২০২৪ ঘণ্টা
এমইউএম/এমজেএফ