উপরের মন্তব্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের। শনিবার (১১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মৎস্যভবনে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০১৭ উদযাপন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলানিউজকর্মীর করা, ‘রাজধানীসহ দেশের বাজারে অনেক বিদেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর উপর মন্ত্রণালয় সঠিক নজর রাখছে কি’? এবং ‘বিদেশ থেকে আনা ইলিশ আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত কিনা’? --এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী উপর্যুক্ত মন্তব্য করেন।
প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বাজারে যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, এটা আমাদের গৌরব। কেননা এগুলো আমাদের ইলিশ। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, এবছর কোনো ইলিশ রপ্তানি করা হবে না। দেশের মানুষ সব খেয়েপরে বাঁচুক। দেশের বাজারে বিদেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে এটা ভুল তথ্য।
এদিকে মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দেশে বড় ইলিশের চাহিদা থাকায় মাছব্যবসায়ীরা ইলিশ আমদানি করছেন। কেননা আমাদের বড় ইলিশের সংকট রয়েছে। ইলিশের চাহিদা পূরণ করতে ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে ইলিশ আনছেন। আবার একথাও ঠিক যে বৈধভাবে ইলিশ আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ইলিশ আমদানি হচ্ছে একথা ঠিক।
কাস্টমসসূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে ব্রাইট কোল্ড স্টোরেজ ও এসসি ট্রেডার্স টনকে টন ইলিশ আমদানি করেছে। আর তাতে কাস্টমসের শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ৬৩ লাখ ৮ হাজার ৭৩৫.৬৬ টাকা।
অন্যদিকে চলতি মাসের ১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত কাস্টমের মাধ্যমে ২২টি চালানে ইলিশ আমদানি করা হয়েছে মোট ২৯২ মেট্রিক টন। আর এতে কাস্টমের শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৩ হাজার ৪৮৯ টাকা।
আরও জানা যায়, চলতি মাসের ৬ তারিখে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ওকেএম ট্রেডিং করপোরেশন ২৬.৬ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ আমদানি করেছে। যার বিল অব এন্ট্রি নাম্বার ৩১৯৩৬৯। আমদানি করা ইলিশ খালাস করেছেন সিঅ্যান্ডএফ সংস্থা তিতাস বাণিজ্য। এছাড়া ১২ মার্চ সাততারা মৎস্য ব্যবসায়ী ৭৫ মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করেছে। যার বিল অব এন্ট্রি নাম্বার ৩৪৮০২৭ এবং আমদানি করা ইলিশ খালাস করেছে সিএন্ডএফ সংস্থা করতোয়া ট্রেড্রিং করপোরেশন।
ইলিশ আমদানি বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কাস্টম হাউসের আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাসে নিয়োজিত একজন সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি বাংলানিউজকে বলেন, বৈধভাবে ইলিশ আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই দেশের মাছব্যবসায়ীরা শুল্ক করাদি দিয়ে বিদেশ থেকে ইলিশ মাছ আমদানি করছেন। এছাড়া দেশের বাজারে দেড় কেজির বেশি ওজনের যতো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তারই সবই আমদানি করা। সাধারণত আমরা যেটাকে বার্মা বা বার্মিজ ইলিশ বলে থাকি। আর কাস্টম দিয়ে সবচেয়ে বেশি আসছে মায়ানমারের (বার্মিজ) ইলিশ। এর পাশাপাশি মংলা বন্দর দিয়ে কাস্টমের মাধ্যমে কাতার ও বাহরাইন থেকে ইলিশের মতো দেখতে একধরনের সার্ডিন প্রজাতির মাছ আমদানি করা হচ্ছে। এই মাছটি সার্ডিন বলে আমদানি করা হলেও ব্যবসায়ীরা ইলিশ বলেই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন।
আরও জানা যায়, ইলিশ আমদানিতে শতকরা ৫৯ শতাংশ শুল্ক করাদি থাকলেও আমদানিকারকরা চোখ বুজে ইলিশ আমদানি করছেন।
অন্যদিকে ১শ কেজি ইলিশ আমদানি করতে হলে আরও ১শ কেজি বরফ আনতে হচ্ছে। ফলে সেটাও আমদানিকারকরা শুল্ক করাদি দিয়ে আমদানি করছেন। এরপরও ব্যবসায়ীরা লাভজনকভাবে ব্যবসা করছেন বলে বাংলানিউজের অনুসন্ধানের উঠে এসেছে।
ইলিশ আমদানি করার বিষয়ে এসসি ট্রেডার্সের কর্মকর্তা করীম বাংলানিউজকে বলেন, তারা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মায়ানমার থেকে ২০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ আমদানি করেছেন। দেশে বড় ইলিশের চাহিদা থাকায় তারা সফলতার সঙ্গে ইলিশ আমদানি করছেন।
ঢাকা কাস্টম হাউসের সহকারি কমিশনার মো. আল-আমিন বাংলানিউজকে বলেন, আমদানিনীতি আদেশ অনুসারে ইলিশ আমদানি নিষিদ্ধ নয়। ফলে আমদানিকারকগণ যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে বৈধভাবে শুল্ক করাদি পরিশোধ করে ইলিশ আমদানি করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিষয়ক গবেষক ড. আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশে বড় ইলিশ না থাকায় বার্মিজ ইলিশ আমদানি হচ্ছে বেশি। তবে দেশি ইলিশের চেয়ে বার্মিজ মাছে পুষ্টি কম রয়েছে এবং স্বাদও কম।
ইলিশে রয়েছে অ্যাসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড। এটি মস্তিষ্কের বুদ্ধি বিকাশে খুবই উপকারী। হার্টের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, প্রজননতন্ত্র গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে। এটি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমায়।
ড. আনিসুর রহমান আরো বলেন, মায়ানমার থেকে যে মাছগুলো আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলো মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও কাস্টমের সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সঠিক পরীক্ষা ছাড়া যদি ফরমালিনযুক্ত মাছ আমদানি করা হয়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বার্মিজ ইলিশ আমদানির ক্ষেত্রে সঠিক তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৭
এসজে/জেএম