লেগুনার হেলপার সুনীল। ছবি: বাংলানিউজ
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): শৈশব মানেই দুরন্তপনা। শৈশব মানেই সময় কাটবে খেলা আর পড়ায়। কিন্তু ১২ বছর বয়সী শিশু সুনীলের শৈশবের গল্প ভিন্ন। তার শৈশব কাটছে লেগুনার পাদানিতে। দারিদ্রের কষাঘাতে প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হতে পারেনি সুনীল।
কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত চলাচলকারী যৌথ পরিবহন নামে একটি লেগুনায় হেলপারের কাজ করে সুনীল। লেগুনার পাদানিতে চড়ে প্রতিদিন ভোরে। ওই পাদানিতেই কেটে যায় সারা দিন। কাজ শেষ হয় রাত ১০টায়। কখনোবা আরো গভীর রাত পর্যন্ত ঝুলতে হয় পাদানিতেই।
সুনীলরা তিন ভাই। সে সবার ছোট।
বড় দুই ভাই ইসলামপুরে কাপড়ের দোকানে চাকরি করে। কেরানীগঞ্জের ঝাউবাড়ী এলাকায় ২ ভাই ও বাবার সঙ্গে একটি বাসায় ভাড়া থাকে সুনীল। তাদের বাবা মানিক মুচির কাজ করেন নয়াবাজারে।
মায়ের কথায় স্মৃতিকাতর সুনীল বলে, আমি ছোড থাকতে মায় মইরা গেছে। মায়রে কোনদিন দেহি নাই। বাপের মুখে হুনছি মার নাম আছিলো তুলশি।
প্রশ্নের উত্তরে সুনীল বলতে থাকে, ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ছি। ফাইভে ভর্তির পরই বাপে এই কামে লাগাইয়া দিছে। অহন আর ইস্কুলে যাই না। আমার আর লেহাপড়া অইব না।
নিজের কাজ সম্পর্কে সুনীল বলে, এই কাম করতে অনেক কষ্ট হয়। হারাদিন যাত্রী ডাহি আর ভাড়া কাটি। হেই সকাল থন রাইত পর্যন্ত কাম। কোন খেলোনের টাইম নাই। হারাদিন পর ড্রাইভার ১০০ টাকা বেতন দেয়। খাওন খরচ হের। টাকা নিয়া আমি বাপের হাতে দিয়া দেই। বাপে ১০-২০ টাকা খাইতে দেয়।
সুনীলের কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তার কোন ধারণাও নেই তার। বড় হয়ে কি হবে জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, বড় অইয়া পাকা ড্রাইভার অমু। কোনদিন এক্সিডেন্ট করুম না। বড়লোকের গাড়ি চালামু।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
জেডএম/
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।