বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞানী, গবেষক ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং বিশেষ অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
ভালো গবেষণায় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে এ কাজে যত্নবান হতেও গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান গবেষণায় সরকার সব সময় পাশে আছে। যারা ভালো গবেষণা করবেন, তাদের সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করে যাবো’।
গবেষকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা চাই, গবেষণার কাজ সকলে মনোযোগের সঙ্গে করবেন’।
তিনি বলেন, ‘যারা গবেষণা করে জাতিকে ফলাফল দিতে পারবেন, আমাদের চিন্তা চেতনায় আছে, তাদের আরো বেশি সহযোগিতা করে যাওয়া। এবং তা আমরা করে যাবো’।
গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ’।
‘উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রযুক্তির ব্যবহার, গবেষণা ও বিজ্ঞানের চর্চা বাড়ানো’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, ধান, তরকারি চাষ করলে হয়ে যায়। কিন্তু না, এখানেও বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রয়োজন আছে’।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি বলেই আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশ। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছি, মাংস ও অন্যান্য আমিষ উৎপাদনেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এগুলো এমনি এমনি হয়নি। সবই বিজ্ঞান ও গবেষণার অবদান’।
আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সরকারগুলো গবেষণাকে গুরুত্ব দিতো না অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর সরকারে এসে দেখলাম, গবেষণার জন্য একটি টাকাও খরচ করা হতো না’।
‘খুব অবাক হলাম, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় ছিলো, তাদের মাথায় এটা কেন আসেনি, যে গবেষণা ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই উন্নতি করা সম্ভব না। এটা হলো বাস্তবতা’।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী না, নিরেট বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। তারপরও অন্তত এটুকু জানি যে, একটি দেশকে উন্নত করতে হলে সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন। তাই শিক্ষক-গবেষক সবাইকে অনুরোধ করবো, বিজ্ঞান গবেষণায় সবাই যত্নবান হবেন’।
গবেষণা বাড়াতে আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শুধু গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলাম। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো গবেষণা করতো। তাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হতো না। আমরা সেই ব্যবস্থা করলাম’।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চা বাড়ানোর পাশাপাশি সকল সেক্টরে গবেষণা বাড়াতে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, বরাদ্দ বৃদ্ধি, বৃত্তি প্রদান, অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে গড়ে তুলতে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অনীহা ছিলো।
বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় বৃত্তি প্রদান, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের চলমান পদক্ষেপসহ উন্নত মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
শিক্ষার প্রসারে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিত্তশালীদের অনুরোধ করবো, গ্রামে স্কুল-কলেজ আছে। সরকার কতোটুকু দেবে, সে আশায় বসে না থেকে নিজেরাও অনেক অনুদান দিতে পারেন। তাহলে প্রতিটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম হয়ে যাবে। ছেলে-মেয়েরা আধুনিক প্রযুক্তিতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে’।
দেশে-বিদেশে পড়াশোনা-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানী ও গবেষক তৈরির উদ্দেশ্যে ফেলোশিপ ও বিশেষ অনুদান প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৯০১ জন শিক্ষার্থী ও গবেষকের মধ্যে ৩৭ কোটি ৫১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে ১ হাজার ৭০২ জন শিক্ষার্থী ও গবেষকের মধ্যে ৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার টাকার ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
২০০৯-১০ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫৩টি প্রকল্পের অনুকূলে গবেষণা অনুদান এবং শুধু চলতি অর্থবছরে ৩৯৫ টি গবেষণা প্রকল্পে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। এ দেশকে আমরা উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলবো। কারও কাছে হাত পেতে চলবো না’।
‘আমাদের কর্মসূচি মানুষের কাজে লাগছে। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে’।
দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো জায়গা হবে না বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন উপসর্গ জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি। এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির অনুরোধ জানাবো। আমাদের তরুণ-যুবকেরা বিদেশেও মেধার পরিচয় দিচ্ছেন। এরা যেন ঝরে না যান, বিপথগামী না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে সবাইকে বলবো’।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকজনের হাতে ফেলোশিপের চেক তুলে দেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব সিরাজুল হক খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
এমইউএম/এএ/এএসআর