ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুমের মধ্যে শুরু হয় তাণ্ডবলীলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
ঘুমের মধ্যে শুরু হয় তাণ্ডবলীলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বড়াইল বস্তি। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা : মধ্যরাতে বস্তিবাসী যখন ঘুমে, তখন এলাকাজুড়ে শুরু হলো আগুনের তাণ্ডবলীলা। ‘আগুন আগুন’ চিৎকারে যখন ঘুম ভেঙেছে, ততক্ষণে সব মালামালই পুড়ে গেছে তাদের। কোনমতে দৌড়ে বের হয়ে জীবনটাই কেবল রক্ষা করতে পেরেছেন তারা।

আগুনে কড়াইল বস্তির বেশিরভাগ অংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিন্মবিত্ত মানুষগুলোর বাসস্থান এখন শুধুই ছাই।

শেষ সম্বল বলতে পরনের কাপড়।

বস্তির বউ বাজারের টেইলার্সের দোকানদার রুহুল আমিনের দোকানের পাশেই থাকার ঘর। ২০১০ সালে নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় এসে আশ্রয় নেন এই বস্তিতে। তিল তিল পরিশ্রমের অর্থ জমিয়ে করেছেন দুটি টেইলার্স দোকান।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রাত পৌনে তিনটার দিকে আগুন আগুন চীৎকারে ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে বাইরে এসে দেখি দোকানের কাছে আগুন। নগদ টাকাগুলো আনতে দোকানের ভেতরে যাই, ততক্ষণে দোকানের চালায় আগুন ধরছে। আগে জান বাঁচানো, কোনমতে দৌড়ে বের হই। কিছু নিয়া বাইর হইতে পারি নাই।

'রুজি করার এইডাই আছিল, আর কিছু নাই। কী করমু এহন আল্লাই জানে' বলেন তিনি।

দুই দোকান মিলে আট লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান রুহুল আমিন।

আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে বসে পোড়া স্তূপ নেড়েচেড়ে দেখছেন জামাল। তিনি বলেন, বউয়ের কিছু স্বর্ণের জিনিস আছিল, দেখি পাওয়া যায় কীনা। ছালি ছাড়া কিছুই নাইরে ভাই। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কড়াইল বস্তি।  ছবি: ডিএইচ বাদল

ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোনমতে বের হয়েছেন নিলুফা। পাশেই পাঁচ বছরের ছেলে আরিফ কাঁদছে। নিলুফা বলেন, ছেলেডা দুই-এক টাকা করে কিছু টাকা জমাইছে ব্যাংকে। সেইটার জন্য ছেলেডা কানতাছে। পরনের কাপড়গুলান ছাড়া কিচ্ছু নাই আর।

বিলকিস নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, যদি রাইত না হইতো, যদি ঘুমের মধ্যে না থাকতাম, তাইলে কমপক্ষে টাকা-পয়সাগুলো নিয়া বের হইতে পারতাম।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, এর আগে আগুন লাগলে চারপাশে ঘরগুলো ভেঙে দিয়ে আগুনের ছড়িয়ে পড়া রোধ করা গেছে। কিন্তু এবার ঘরগুলোর নিচের দিকে পাকা হওয়ায় ভেঙে দেওয়া যায়নি। বাতাসে দ্রুতই চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই চারপাশ থেকে ফায়ার সার্ভিস আসে। ভেতরে গাড়ি ঢুকেনা, তাই প্রথম অবস্থাতে ২৮ টি পাইপ দিয়ে ভেতরে পানি দেওয়া শুরু করি। ঘরগুলোর নিচে পাকা আর উপরে টিনের দোতলা ঘর। ঘর ভেঙ্গে যে আগুন আটকাব, তারও উপায় ছিলো না। এদিকে উপর দিক দিয়ে দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ভোর রাতে একটা বাতাস আসে- যার জন্য আগুন আরো ছড়িয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতবার আগুন লাগছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হইছে এবার। প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার ঘর পুরাপুরি পুইড়া গেছে।

মাঝখানে কয়েকবার ছোট আগুনের ঘটনা ঘটলেও সর্বশেষ ২০০৪ সালে কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লাগে বলে জানান বস্তিবাসী।

অগিকাণ্ডের পর বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
পিএম/জেডএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।