বস্তির গুদারাঘাটের দোকানগুলোর পেছনেই বাসা ছিল মোসাদ্দেকের। গুলশান এলাকায় রিকশা চালান তিনি।
গত ৪ বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে বাস করেন মোসাদ্দেক। এ পর্যন্ত ৬ বার ঘর পুড়ে থাকার জায়গা বদল করতে হয়েছে তাকে। এক রুমের টিনের ঘরের জন্য ২০১২ সালে মোসাদ্দেককে দিতে হতো ৫০০ টাকা। এখন সে ভাড়া দাঁড়িয়েছে ২০০০ টাকায়। এর সঙ্গে বারবার ঘর নির্মাণের খরচতো রয়েছেই। ২০০০ টাকা খরচ করে বস্তিতে থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গুলশান এলাকায় রিকশা চালানোর আয় কিছুটা বেশি। আবার আশপাশে কম ভাড়ায় বস্তি ছাড়া জায়গা নেই।
মহাখালী ফুটপাতের হকার মোহাম্মদ সোলিম বলেন, বস্তিতে পানির সমস্যা নাই। কারেন্টের সমস্যাও কিছুটা কম। তবে ভাড়া দিন দিন বাড়ছে। আর একবার আগুনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারও আগুন লাগে।
বস্তির বউ বাজারের পূর্বপার্শ্বে মালেক সর্দারের জায়গায় বাসা ভাড়া থাকেন তিনি। সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আবার যখন ঘর বানাবো দেখা যাবে ২০০ টাকা ভাড়া বেশি। আবার নতুন কাউকেও ওই ঘর ভাড়া দিয়ে দিতে পারেন জায়গার মালিক। অনেক সময় জায়গার মালিকও পরিবর্তন হয়ে যায় অগ্নিকাণ্ডের পর। বুধবার (১৫ মার্চ) দিনগত মধ্যরাতের ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কড়াইল বস্তি। এখানকার মানুষের ঘরে জমিয়ে রাখা চাল, ডাল, তেল, নুন তাদের কাছে অনেক দামী। অনেকেরই ঘরের কোথাও না কোথাও ৫-১০ হাজার টাকা জমানো ছিল। রাত পৌনে ৩টার দিকে আগুন আগুন চিৎকার শুরু হলে জীবন বাঁচাতে সবকিছুর মায়া ছেড়ে শুধু পরিবার নিয়ে বেরিয়ে আসেন সবাই।
এখানকার বস্তিবাসী নারীদের বড় একটি অংশ গুলশান-বনানী এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাদেরই একজন জোহরা বাংলানিউজকে জানান, নাভানা টাওয়ারের একটি অফিসে ধোঁয়া-মোছার কাজ করেন তিনি। গত ৮ বছর ধরেই দুই সন্তান নিয়ে কড়াইলে থাকেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামী গ্রামের বাড়ি জামালপুরেই থাকেন।
জোহরা বলেন, এখানে অনেকেই বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। এসব এলাকায় বুয়ার (গৃহকর্মীর) কাজ করলেও মাসে আয় হয় ৫-৬ হাজার টাকা। আমার জমানো টাকা ছিল ২৫ হাজার টাকার মত, সব শেষ। ছোট ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে এসেছি জীবন নিয়ে।
বস্তির বাসিন্দাদের অনেকে জানান, ঘর ও অবস্থানভেদে দেড় হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার ঘরও ভাড়া পাওয়া কড়াইলের এ বস্তিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
এমএন/এইচএ/
** ঘুমের মধ্যে শুরু হয় তাণ্ডবলীলা