ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বেতনের টাকাও পুড়ে গেছে রুমার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
বেতনের টাকাও পুড়ে গেছে রুমার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রুমা

ঢাকা: মহাখালীতে একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করেন রুমা। কড়াইল বস্তিতে একরুম ভাড়া নিয়ে মা ও মেয়েসহ থাকতেন তিনি। বুধবার (১৫ মার্চ) বেতন পেয়েছেন। আগুনে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে বেতনের টাকাটা নিয়ে বের হতে পারেন নি তিনি।

পোড়া ঘরের ছাইয়ের স্তূপে বসে আহাজারি করে বলছিলেন, বেতনের টাকাডাও নিয়া বাইর হইতে পারি নাই। সব পুইড়া গেলো, এহন কেমনে চলমু সারামাস?

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কেমনে জিনিসপত্র বাইর করমু।

বুড়া মা ও মাইয়াডারে নিয়া কোনোমতে জানডা লইয়া বাইর হইছি। পরনে যা আছে তাই এহন সম্বল।

চল্লিশোর্ধ্ব এই নারী বলেন, কাম না করলে না খাইয়া থাহন লাগে। আইজ কামে যাই নাই আইজকার টেকা দিব না। এরইমধ্যে এহন কই থাকমু আর কী খামু?

তিনি জানান, এই ঘরে ১২-১৩ বছর ধরে ভাড়া থাকতেন তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে একমাত্র মেয়েকে এইচএসসি পাস করিয়েছেন। এতবছরে তিল তিল করে জমানো সবকিছু চোখের পলকে শেষ করে দিয়েছে আগুন।

অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনায় তিনি বলেন, রাত তিনটার দিকে ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুনের কথা শুনে দরজা খুলে দেখেন দরজার কাছেই আগুন। তখন মেয়ে ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কোনোমতে বাইরে বের হই।

কথার ফাঁকেই কাঁদতে কাঁদতে আবার বলে ওঠেন, আল্লায় আমারে শেষ কইরা দিলো, এহন কই যামু, কী খামু, কও আল্লাগো...।

শুধু রুমা নয় কড়াইল বস্তিতে লাগা ভয়াবহ এ আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছেন হাজারো রুমা। এখন কান্নাই যাদের শেষ সম্বল।

পোড়া ঘরের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন মোর্শেদা। তিনি বলেন, ৯ লাখ টাকা খরচ কইরা তিনতলা বাড়িডা করছি ২-৩ মাস আগে। আইজকা সব শেষ হইয়া গেলো। পথের ফকির হইয়া গেলাম আমরা।

এলাকার নাইটগার্ডের দায়িত্ব পালন করা সামাদ আগুন দেখার পরই বাঁশি বাজিয়ে প্রথম সবাইকে সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, একটা বাড়ির দোতলায় আগুন লাগে। এখান দিয়ে ঘুইরা আরেকপাশে যাওয়ার পর পেছনে দেখি উপরের দিকে আগুন জ্বলতাছে। তহন সব দৌড়াদৌড়ি শুরু করছে। আগুন নিভাইতে পানি লাগে, পানি কই পামু আমরা? তাছাড়া এতো চিপা (সরু) গলি মানুষযে যাইবো হেই উপায় নাই। তারপরেও আমরা দূর থেকে লাঠি দিয়া বাইড়াবাইড়ি কইরা চেষ্টা করছি কাম হয় নাই। পরে ফায়ার সার্ভিস আইসা পানি দেওয়া শুরু করছে।

ফায়ার সার্ভিস একদিকে পানি দিলে আররকদিকে আগুন বাড়ে, এভাবেই চলতে থাকে। এরইমধ্যে খুব দ্রুতই আগুন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে যায় বলে জানান তিনি।

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীদের সহায়তায় বউবাজার জামে মসজিদের পাশে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

বনানী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি, পেট্রোল) মো. জমির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের নিরাপত্তা দিতে আমরা কন্ট্রোল রুম খুলেছি। বাইরে থেকে কেউ যেন লুটপাট না করতে পারে, কিছু যেন খেয়া না যায়, আমরা খেয়াল রাখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।