ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘স্যার গো, টেহা চাইনা, থাহনের জাগা চাই’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
‘স্যার গো, টেহা চাইনা, থাহনের জাগা চাই’ পোড়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আনজুমান আরা। ছবি: বাদল

কড়াইল বস্তি ঘুরে: ‘স্যার গো, টেহা চাইনা, থাহনের জাগা চাই’- বিলাপ করতে করতে এ আকুতিই জানাচ্ছিলেন কড়াইল বস্তির ঘর পোড়া নারী আনজুমান আরা বেগম। বয়স ৫০।  স্বামী মারা গেছে ১১ বছর আগে। দুই ছেলে  আর ৩ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যে যার  মতো  আছে।  আনজুমান দুই ছেলে নিয়ে কড়াইল বস্তিতেই আছেন বছর ছয়েক ধরে।

ছোট্ট একটি খাবারের দোকানে ছেলেরা যা ইনকাম করে তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে যায়। কিন্তু  সর্বনাশা আগুন সেই  দোকানসহ তাদের থাকার জায়গা, জিনিসপত্র সব পুড়িয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

আনজুমান আরা বলেন, রাত তখন দুইটা কি তিনটা। হঠাৎ শুনতে পাই আগুন আগুন করে সবাই চিৎকার করছে।   আমার ছেলের দোকান আমার ঘর থেকে ২০/২৫টা ঘরের পেছনে। সেখানে গিয়ে দেখি, দোকান ঘর দাউ দাউ করে পুড়ছে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি হাউমাউ করে কাঁদছি। আমার ছেলেরা আগুনের মধ্যে দোকানে ঢুকতে চাইছিলো। কিন্তু আমি দেই নাই। দোকান পুড়লে আল্লায় আবার দিবো। কিন্তু পোলা হারাইলে তো পামু না। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কড়াইল বস্তি।  ছবি: বাদল

তিনি বলতে থাকেন, চোখের সামনে দোকান পুইড়া যাওয়া দেখতে দেখতে ঘরের কথা মনেও আছিলো না। কেউ একজন কইলো, খালা গো তোমার ঘরও পুইড়া সাফ। মনে হইলো, মাটির নিচেও আমার জায়গা নাই। দৌড়ায়া গিয়া দেহি, আমার সব শেষ হইয়া গেছে। পিনদনের কাপড়ও নাই । আমি এখন কি খামু, কই থাহুম?

স্যার গো, আপনেরা ছবি তুইলা লইয়া যান। আমি টেহা চাইনা, থাহনের জাগা চাই। ভিক্কা তো করতে পারুম না। না খাইয়া, আসমানের নিচে থাইকা মরণ লাগবো।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। সেখানে বস্তির ১৫ শতাংশ  ঘর বাড়ি পুড়ে যায়। শত শত মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে অবস্থান নেয় খোলা আকাশের নিচে। কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া ছাইয়ে খুঁজে বেড়ায়  শেষ সম্বল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।