ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কড়াইল বস্তিবাসীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
কড়াইল বস্তিবাসীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা কড়াইল বস্তির ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা-ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: এখন ইট-কাঠ-টিন দিয়ে তৈরি থরে থরে সাজানো ঘরগুলো আর নেই। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দুমড়ে-মুচড়ে ও রং বদলে কালচে হয়ে উঠেছে টিনগুলো।
 

অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর মনে কষ্টের আঁচড় পড়েছে ঠিকই, তবে মনোবলটা একেবারে হারিয়ে যায়নি। কালচে হয়ে যাওয়া টিনগুলোকেই আবার একে একে সাজাচ্ছেন মাথার ওপরে।

এ যেন ধ্বংসের মধ্যেই নতুন সৃষ্টির সূচনা কড়াইল বস্তিবাসীর।

তিল তিল করে গড়ে তোলা সবকিছুই শেষ তাদের। সামনের বেলা কী খাবেন তার ঠিক নেই। তাই বলে দমে যেতে শিখেনি এ ছিন্নমূল মানুষগুলো।

শুক্রবার (১৭ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, অবশিষ্ট টিনগুলোকে একসঙ্গে করে বাঁশ দিয়ে মাথার ওপর ছাউনি দিচ্ছেন। কেউ বা আবার পলিথিন, বড় কাপড় টাঙিয়ে নিয়েছেন ওপরে। এভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে তাদের।

পোড়া বাড়ির ভিটেতে বৃদ্ধ বাবা শুয়ে আছেন রফিকুলের। বাবার পাশে মা, স্ত্রী, সন্তানরা শুয়ে বসে আছেন। পোড়া টিনগুলো বাঁশ দিয়ে মাথার ওপরে কোনোভাবে আটকে রেখেছেন।

রফিকুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘কী করমু কন, আপাতত শুইয়া-বইয়াতো থাকন লাগব। চারদিকে এমনিতেই তাপ, তার মধ্যে কড়া রইদ (রোদ)। বাপটা অসুস্থ, এ অবস্থায় কই যামু? বাঁচি আর মরি এহানেই থাকতে অইব। ’কড়াইল বস্তির ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা-ছবি: কাশেম হারুনমরুভূমি হয়ে যাওয়া বস্তিতে সবাই যখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তখন পোড়া অংশের মাঝখানে এক জায়গাতে চা বিক্রি করছেন রফিকুল ইসলাম।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, এখানেই তার দোকান ছিল। পাশে থাকার ঘরটিও পুড়ে গেছে। আজ ধার করে নতুন করে চায়ের কিছু সামগ্রী কিনে এনেছেন। তাই দিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি।

পোড়া স্টিলের শোকেস থেকে জিনিসপত্র বের করছিলেন খাদিজা। ভেতর থেকে যাই বের করছেন সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নয়তো গলে গেছে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘর ভরা জিনিস আছিল, পুড়নের আর কিছু বাকী নাই। ২৫ বছর যা কামাই করছি সব এ ঘরে ঢুকাইছি। দেশেও কিচ্ছু করি নাই। জীবনের সব সম্বল হারাইলাম। ’

দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছেলে এখনো ছোট। স্বামী মান্নানের কর্মক্ষমতাও ফুরিয়েছে এখন। অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালানো খাদিজা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছেলেটা যদি বড় অইতো তাইলেতো চলতো। এহন সবকিছু কবে জোড়ামু আর কেডা জোড়াইব?’

তিনি আরও জানান, গত রাতে খোলা আকাশের নিচেই ছিলেন। নতুন করে ঘর তোলার জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই তার। কোনো ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই থাকতে হবে। কড়াইল বস্তির ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা-ছবি: কাশেম হারুনপোড়া চাল-ডালের স্তূপের পাশেই বসে আছেন বাবুল। এখন তার মুদি দোকানের অবশিষ্ট শুধু পেছনের দিকে ইটের একটি দেয়াল।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, গত রাতে কেউ খাবার দিয়েছিল, আজ দুপুরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হয়। বুধবার থেকে দোকানেই শুয়ে-বসে সময় কাটছে। এখন কী করবেন সেটাই ভাবছেন তিনি।

এর আগে বুধবার (১৫ মার্চ) দিনগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে কড়াইল বস্তির বউবাজারের বড় মসজিদ সংলগ্ন দোতলা একটি বাসায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের কর্মীদের পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় মধ্যরাতে লাগা ভয়াবহ এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল পৌনে ৮টায়। ততক্ষণে প্রায় দুই হাজার বাড়ি পুড়ে নিঃস্ব হয়ে যায় হাজারো বস্তিবাসী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
পিএম/আরবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।