শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
সবাইকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজ নিজ এলাকায় তৎপর থাকবেন। সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের বিষয়ে কোনো তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান বাংলাদেশে হবে না।
শেখ হাসিনা অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, সন্তানদের বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। তারা যেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস এবং মাদকাসক্তিতে জড়িত না হয়। তারা যেনো মানুষের মতো মানুষ হয়, আগামী দিনের নাগরিক হিসেবে এদেশকে পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত হিসেবে গড়ে ওঠে।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বস্তরের জনগণ; শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম, ওলামাগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা পালন করবো আমরা। ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো, তার জন্মদিনে এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠনকে বলবো, এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। ষড়যন্ত্রের অভাব নেই উল্লেখ করে এবং পদ্মাসেতু নিয়ে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করি বাংলাদেশের জনগণের জন্য, রাজনীতি করি পিতার আদর্শে। জনগণের জন্য যেকোনো তাগ স্বীকারে যেখানে প্রস্তুত সেখানে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ এনে ভয় দেখাবে, আমিও তো ওই রকম বাবার সন্তান নয়। আমি শেখ মুজিবের সন্তান।
তিনি বলেন, দেখেছেন কানাডার সেই ফেডারেল কোর্ট বলে দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের সকল অভিযোগ মিথ্যা, ভুয়া ও বানোয়াট।
সততাটা একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় শক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যতই ষড়যন্ত্র চলুক না কেন, সততার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।
বক্তব্যের শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার জন্ম না হলে এ স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। বঙ্গবন্ধু নিজে ছিলেন স্বাধীনচেতা, তিনি দেশকেও স্বাধীন করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে তিনি না গেছেন। তিনি মানুষের মাঝে আত্মসচেতনতা সৃষ্টি করেছিলেন। অধিকার চেতনা সৃষ্টি করেছেন। দিয়েছেন ছয় দফা; করেছেন কারাবরণ। কোনো লোভ-লালসার কাছে তিনি মাথা নত করেননি।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পর এবার বঙ্গবন্ধুর কারাস্মৃতি নিয়ে ডায়েরি থেকে দ্বিতীয় খণ্ড আত্মজীবনী ‘কারাগারের রোজনামচা’ এর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আরেকটি আত্মজীবনী প্রকাশ হয়েছে, যার নামটি শেখ রেহানার দেওয়া। শিগগির এই বইটির প্রকাশনা উৎসব করা হবে।
সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাওলানা খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দি, আহমেদ হোসেন, আব্দুস সোবহান গোলাপ, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা একেএম রহমতউল্লাহ, শাহে আলম মুরাদ, সাদেক খান প্রমুখ।
সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। জাতির জনককে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭/আপডেট ২১২১ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ
আরও পড়ুন
** বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না
** বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী: কারাগারের রোজনামচা