দরিদ্র এসব মানুষগুলোর অধিকাংশেরই ব্যাংক ব্যবস্থার সঙ্গে এখনো পরিচিত হয়ে ওঠেনি। ফলে, সঞ্চয় জমাতো ঘরেই, সুটকেস বা বিছানার তোশকের ভাঁজে।
শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, কড়াইল বস্তিতে ফিরে আসছেন মানুষ। অনেকেই প্লাস্টিক দিয়ে বা পুড়ে যাওয়া টিনগুলো দিয়েই কিছুটা ছাদ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যাদের দোকান ছিলো, তারা আবারও এক জার বিস্কুট এবং চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে বসেছেন। খুব দ্রুত দাঁড়িয়ে ওঠার সংগ্রামে নেমেছেন তারা।
মহাখালী ফুটপাথে হকারি করেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ বস্তিতে ১৯টি ঘর ছিলো তার। ঘরগুলোর ভাড়া ছিলো দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।
তিনি বলেন, সবগুলো ঘর পুড়ে গেছে। এখন আবার এগুলো তৈরি করতে হবে। এনজিও বা সরকার থেকে যদি ঘর উঠিয়ে দেন, তবে ভাড়াটিয়ারাই ঘর তুলবেন। তাদের জায়গা ভাড়া দেওয়া।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সুলতানা বলেন, আগুন লাগলে আর কোনো দিকে তাকানোর সুযোগ পাইনি। উনারে (জাহাঙ্গীর) বলছিলাম স্বর্ণটা নিয়া বের হইতে। উনি তোশকের থেকে বের করার আর সময় পায় নাই। আমার জীবনের সঞ্চয় ছিলো ওই ৪ ভরি স্বর্ণ। আর কিছুই নেই।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাইকে যার যার নির্ধারিত ঘরের স্থানে বসার জন্য বলা হয়, কিছুক্ষণ পরেই দুপুরের খাবার হিসেবে খিঁচুড়ি বিতরণ করা হবে। একই সঙ্গে অন্যদের জিনিস নিয়ে না যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জালাল মাঠের কাজ করেন। তিনি বলেন, ঘর আগুনে পুড়লেও কেউ ছেড়ে যায়নি। কারণ এ সুযোগে অন্য কেউ জায়গা দখল করে নিতে পারে। তাই, এ সময়টায় সতর্ক থাকতে হয়। স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে খাবারের অপেক্ষা করছে পরিবারটি। তিনি বলেন, আমার নগদ অর্থ প্রায় ১১ হাজার টাকা পুড়ে গেছে।
মসজিদের পাশের বস্তিবাসীদের অভিযোগ, তাদের এ দিকে খাবার না দিয়ে কুমিল্লা পট্টি এবং ক-ব্লকে বেশি দেওয়া হচ্ছে। যদিও কুমিল্লা ব্লকে যেয়েও একই অভিযোগ পাওয়া যায়।
বাগেরহাটের আব্দুল জলিলের দোকান ছিল ক-ব্লকের রাস্তায়। শনিবার সকালে বাজার থেকে একডজন কলা আর এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে আবারও দোকান দিয়েছেন একটি গামছার ওপর।
তিনি বলেন, এখানে আমার চায়ের দোকান ছিল। পোড়ার দিনও প্রায় ৫ হাজার টাকার মাল ছিল। আর দোকানের ক্যাশে ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এখন আবার ঋণ নিয়ে এ দোকান করতে হবে।
কুমিল্লার রেনু মিয়ার বাসাতেও ছিল ২২ হাজার টাকা। পেশায় দর্জি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। রেনু মিয়া বলেন, অনেক কষ্টে এ টাকা জমিয়েছিলাম। সামনে গ্রামে মেয়ের বিয়ে দিবো। অন্তত দুই ভরি স্বর্ণ হলেওতো দিতে হয়।
বস্তিবাসীদের বেশিরভাগই জানান, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তারা ঘরেই সঞ্চয় রাখতেন এবং একটা পর্যায়ে সেই টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন বা কোনো প্রয়োজনীয় আসবাব কিনে বা বিনিয়োগ করে খরচ করতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
এমএন/ওএইচ/এসএইচ