যশোর-খুলনা মহাসড়কের দু’পাশ দিয়ে পর্বতশৃঙ্গের মতো সুউচ্চ ড্যাম্প করা কয়লার উত্কট ঝাঁঝালো গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তবে কয়লার স্তূপের বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক।
ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, নওয়াপাড়ার শেখ ব্রাদার্স, জয়েন্ট ট্রেডিং, সাহারা এন্টারপ্রাইজ, দি গোল্ডেন, ফ্রেন্ডস ও সরকার ট্রেডার্সসহ আট থেকে ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারীরা সাউথ আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতিবছর কোটি টন কয়লা আমদানি করেন। সমুদ্র পথে জাহাজে করে আনার পর কার্গো ও বার্জে করে নদী পথে এই কয়লা চলে আসে নওয়াপাড়ায়। পরে সড়ক পথে চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। যা মূলত ব্যবহার হয় ইটভাটায়। তবে কার্গো ও বার্জ থেকে আনলোড করা লাখ লাখ টন কয়লা উন্মুক্ত স্থানে গুদামজাত করা হয়। অথচ আইন বলছে, কয়লা ব্যবসায়ীদের আমদানি লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য নির্দিষ্ট গুদাম থাকা বাধ্যতামূলক। তবে আইনে যাই থাকুক না কেন নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা কয়লা মজুদের জন্য নির্দিষ্ট ফর্মুলা কিংবা কোনো গুদাম ব্যবহার করেন না।
সরেজমিন দেখা যায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের চেঙ্গুটিয়া বাজার পার হয়ে রাস্তার দু’ধারে কয়লার বড় বড় ড্যাম্প রয়েছে। এছাড়া চেঙ্গুটিয়া ঘাট, দিপু স্টোন ঘাট, আলিপুর ঘাট, ভাঙ্গাগেট, বেঙ্গল ঘাট, সরদার মিল, মশরহাটি, পাঁচকবর, স্টেশন বাজার, ব্রাইট ঘাট, তামান্না ঘাট, পীরবাড়ি ঘাট, উপজেলা ঘাট, ব্রাদার্স ঘাট, শেখ ঘাট, থানার পেছনে, তালতলা ঘাট ও রাজবাড়ী ঘাট পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয়েছে লাখ লাখ মেট্রিকটন কয়লা। যেসব কয়লার কোনো কোনো অংশে আগুন জ্বলছে। যেখান থেকে নির্গত ধোয়া মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস বাতাসে মিশছে। এছাড়া গোটা এলাকার বাতাসের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে কয়লার কণা। ফলে ওই এলাকায় বাসিন্দা, বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ এবং কয়লা লোড-আনলোড শ্রমিকদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করছে বিষ। যার দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্থানীয়রা জানান, নওয়াপাড়ার অন্তত আটজন আমদানিকারক রেলওয়ে ও নৌ-বন্দরের জমি দখল করে কিংবা অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে বছরের পর বছর কয়লা ড্যাম্পিং করে রাখছেন। তবে আমদানিকারকরা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় সব ঘাট ম্যানেজ করে এ ব্যবসা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কয়েকটি সংস্থা প্রতিমাসে মাসোহারা আদায়ের মাধ্যমে তুষ্ট থাকেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সাইবুর রহমান মোল্যা বাংলানিউজকে বলেন, কোনোভাবেই কয়লা উন্মুক্ত স্থানে রাখা ঠিক না। কয়লা থেকে নির্গত সালফার ডাই অক্সাইড মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, কয়লা ড্যাম্পিংয়ের আইন রয়েছে। তবে কেউ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়নি।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কয়লার ড্যাম্প সরাতে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। তবে কয়লার মালিকদের ড্যাম্পের আশপাশে না পেয়ে ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, কয়লা আমদানিকারকদের অধিকাংশই নওয়াপাড়ায় থাকেন না; তারা ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকেন। তবুও শ্রমিকদের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, দ্রুত কয়লা সরিয়ে নিতে। এছাড়া কয়লার মালিকরা রেলওয়ের জায়গা বরাদ্দ নিয়ে ব্যবহার করছেন বলে জানালেও রেলওয়ের দাবি, তারা এ ধরনের কাজে ব্যবহারের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
এসআই