সোমবার (২০ মার্চ) রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ’র মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শ্রিংলা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে।
‘আপনাদের সোনার বাংলার স্বপ্ন, আমাদেরও স্বপ্ন। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্যে ভারত আপনাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমরা অবশ্যই শান্তিতে ও সংহতিতে ভালো প্রতিবেশী হিসেবে সব সময় একে অন্যের পাশে থাকবো। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম অফিসিয়াল ভিজিটে ভারত যাচ্ছেন। সর্বশেষ ২০১০ সালে তিনি ভারত সফরে গিয়েছিলেন। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন-হাম পাস পাস থে। আব হাম সাথ সাথ ভি হে। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা একসঙ্গেই আছি। ’
ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন (আইটেক) প্রোগ্রাম এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব কালচারাল রিলেশন্স (আইসিসিআর) দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ভারতীয় হাইকমিশন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দু'দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরের ধারা; যাদের সবাই ভারত থেকে সঙ্গীতে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন।
বিকেল ৫টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটার দিকে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এএইচএম মুস্তফা কামালমহ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা, আইসিসিআর এর প্রাক্তণ শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, আইটেক ও আইসিসিআর এর প্রশিক্ষণার্থী ও শিক্ষার্থীরা দুই-দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন। গত চার বছরে প্রায় ১ হাজার ২শ’ বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা ভারতে বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররাও (ইউএনও) প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আপনারা যাদের ডিসি বলেন, আমরা তাদের ডিএম বলি। এই ডিসি এবং ডিএম মিলে আলোচনা করে দু’দেশের অনেক সমস্যার সমাধান করেন।
আইসিসিআর এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারত যান। যা গঠন করেছিলেন মওলানা আবুল কালাম আজাদ।
ক্রিকেট সম্পর্কে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, রোববার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশের টাইগাররা শততম টেস্ট জয় এনেছে। বাংলাদেশ দ্রুত ক্রিকেটে উন্নতি করছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এএইচএম মুস্তফা কামাল প্রথমেই ’৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারতের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত একে অন্যের পরিপূরক। কেউ কাউকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের চারপাশের ভারতের বাউন্ডারি। এই বাউন্ডারি আমরা তৈরি করিনি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে আগে আমরা একসাথেই ছিলাম।
তিনি বলেন, ভারতের আমার পড়াশুনোর সুযোগ হয়নি। তবে আমার অনার্স, এলএলবি, চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অধ্যয়নের সময় একটি মাত্র বই ছাড়া বাকি সব বই ভারতীয় লেখকের পড়তে হয়েছে। সেদিক থেকে আপনারা যারা আইসিসিআর এ বৃত্তি পেয়েছেন, তারা সৌভাগ্যবান। আপনারা ভারতে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছেন, সে দেশের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছেন। যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তা প্রয়োগ করে উন্নয়নের অংশিদার হতে আপনাদের কোনো বিচ্যুতি ঘটবে না বলে আশা করি।
তিনি বলেন, ভারতের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দশ বছর পর আরো তিনগুণ বাড়বে। তাই হাইকমিশনাকে বলবো-বৃত্তির সংখ্যাও আরো তিনগুণ বাড়াবেন।
ক্রিকেট নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ যে শততম টেস্ট জয় পেলো, এর পেছনেও সবচেয়ে বেশি অবদান ভারতের। তারা সহযোগিতা না করলে আমরা এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। শততম টেস্ট জয় করতে পারতাম না। সে দিন খুব বেশি দুরে নয়, যেদিন আমরা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী হবোই হবো।
ভারত সরকার ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আইসিসিআর এর মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আসছে। চিকিৎসা শাস্ত্র ব্যতীত শিক্ষার সব শাখায় সব পর্যায়ে (স্নাতক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত) আইসিসিআর শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত ৩ হাজার শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
এছাড়া আইটেক এবং সাউথ-সাউথ কো-অপারেটিভ স্ট্রাটেজি এর কাঠামোর আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ভারতের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ও সঠিক প্রযুক্তি সুবিধা দেয়। এছাড়া হিসাব, নীরিক্ষা, ব্যবস্থাপনা, এসএমই, গ্রামীণ উন্নয়ন, সংসদীয় বিষয়াবলী ইত্যাদি প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য ১৬১টি সহযোগী দেশে ১০ হাজারে বেশি প্রশিক্ষণ পর্বের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আইসিসিআর এর সাবেক শিক্ষার্থী ফাতেমা আমিন।
আলোচনার পর এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আইসিসিআর এর প্রাক্তণ শিক্ষার্থী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মনিরা ইসলাম পাপপু ও নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন পূজা সেনগুপ্ত ও তার দল তুরঙ্গমী রেপার্টরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম