হঠাৎ একদিন ধান কাটতে গেলে বাড়িতে একাকী পেয়ে বাশদা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে আজাহারুল ইসলাম ও আকরাম হোসেনের ছেলে ইমরুল ইসলাম তার মেয়েকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায়।
এ ঘটনায় থানায় মামলা ও আসামিরা গ্রেফতার হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা নিয়ে স্বদেশ, সাতক্ষীরার বার্ষিক রিপোর্ট ২০১৬-তে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে সাতক্ষীরায় অন্তত ৯৯টি নারী নির্যাতন, সাতটি অপহরণ, ১০টি ধর্ষণের প্রচেষ্টা, ১৯টি ধর্ষণ, ১০টি যৌন নির্যাতন এবং ৩৯টি নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা ঘটেছে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার আটটি থানায় ২০১৬ সালে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় ৩০৬টি এবং ধর্ষণের ঘটনায় ৩৬টি মামলা রেকর্ড হয়েছে।
এদিকে, এসব ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব তথা সামাজিক নিরাপত্তা সংকট নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাল্য বিবাহের প্রবণতাকেও উস্কে দিচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। আর তাই নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও বাল্য বিবাহের নেপথ্যে মূল ক্রীড়ানক হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণের কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মুনীর উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটছে। মূলত আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ায় নারীরা সবসময়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ সুযোগেই হাজারো ঝড়-ঝঞ্জা বয়ে যায় তাদের উপর।
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা না থাকায় বাল্য বিবাহ কমছে না। আর বাল্য বিবাহের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মেয়ে শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ। অপরিণত বয়সে মা হতে গিয়ে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি। অপরিণত বয়সী মায়ের সন্তানও পাচ্ছে না শারীরিক পূর্ণতা। একই কারণে বাড়ছে নারী নির্যাতন, ঘটছে বিবাহবিচ্ছেদ ও বহুবিবাহের মতো ঘটনাও। যা নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ।
সাতক্ষীরা জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জোসনা দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, বাল্যবিবাহ সমাজের অভিশাপ। ইভটিজিং, দারিদ্র্যসহ নানা কারণে আমরা এ অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারছি না। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের মাধ্যমে শিশুদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। এতে তারা মানবসম্পদে পরিণত হবে। আর্থিকভাবে ক্ষমতায়িত হবে। এজন্য প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি সামাজিকভাবে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সর্বোপরি নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ রোধে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিকল্প নেই- যোগ করেন তিনি।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিছুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত নানাভাবে নারীর প্রতি অন্যায়-অত্যাচার চলছে। এর থেকে বের হয়ে আসতে হলে পরিবার থেকেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন কিংবা সার্বিকভাবে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
এসএইচ