ইসি’র সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৫ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় একসঙ্গে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে যারা ১৮ বছর পূর্ণ করবেন, তাদের তথ্য নেওয়া হয়েছে। মৃত ভোটার থেকে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ এটিই।
কিন্তু ২০১৫ সালে যেহেতু তিন বছরের তথ্য একসঙ্গেই নেওয়া হয়েছে, সেহেতু গত দেড় বছরে মারা যাওয়া লাখ লাখ ভোটারের নাম তালিকায় রয়ে গেছে। তাদেরকে এখনও বাদ দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি ও বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলা হলেও কোনো নাগরিকই প্রকৃতপক্ষে থানা বা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে মৃত আত্মীয়ের তথ্য দেন না। এটি খুব স্বাভাবিক যে, প্রয়োজন না হলে নাগরিকরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে যান না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকেই একটি পন্থা বের করে মৃতদের নাম বাদ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ইসি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-সচিব। তাদের মতে, ভোটার করার দায়িত্ব যেমন ইসি’র, তেমনি মৃতদের নাম বাদ দেওয়ার দায়িত্বও তাদেরই।
সূত্র জানিয়েছে, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের বিগত নির্বাচন কমিশন চকিদার ও দফাদারদের নিয়োগ করে মৃতদের নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছিল। একবার সে প্রক্রিয়ায় মৃতদের নাম কর্তনও করা হয়েছিল।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ওই প্রক্রিয়ায় প্রতি মৃত ভোটারের তথ্য প্রদানের জন্য ১০ টাকা করে চকিদার ও দফাদারকে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ‘অজানা’ কারণে বিষয়টি আর এগোয়নি।
ইসি’র কর্মকর্তারা মনে করছেন, চকিদার-দফাদারদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করাটাই সবচেয়ে সহজ পন্থা। কেননা, ইসি কর্মকর্তারা থাকেন থানা নির্বাচন কার্যালয়ে বা উপজেলা সদরে। কোন গ্রামে বা মহল্লায় কবে কোন ভোটার মারা গেলেন, তা উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তার জানার কথা নয়। এটি সবচেয়ে বেশি জানেন চকিদার, দফাদার বা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও তাদের অধীনস্তরা। তাই এ কাজে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা চকিদার-দফাদারদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এতে তাদের দশ টাকা করে সম্মানিও দেওয়া যেতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ইসি’র তথ্যভাণ্ডারে ১০ লাখেরও বেশি মৃত ভোটারের নাম রয়েছে। যাদের মধ্যে ৫ লাখেরও বেশি ভোটারের নামে স্মার্টকার্ডও ছাপানো হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকাও গচ্চা যাচ্ছে। একটি স্মার্টকার্ড ছাপাতে খরচ হচ্ছে ১ দশমিক ৫২ ডলার। এছাড়া তা কেন্দ্রে নিয়ে বিতরণসহ সব মিলিয়ে ব্যয় হচ্ছে ২ ডলার। সে হিসেবে ইতোমধ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকা গচ্চা গেছে মৃত ভোটারদের পেছনে।
ইসি’র সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইসি নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিতে ভোটার করে। নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই নাগরিকদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। মৃত ভোটারদের নাম কর্তন সারা বছরই করা যায়। তাই মৃতের স্বজনেরা যদি নিজে থেকে তথ্য দিয়ে এগিয়ে না আসেন, তবে মৃত ভোটারমুক্ত ভোটার তালিকা অসম্ভব। তবে চকিদার, দফাদারদের দিয়েও কাজটি সম্পন্ন করা যেতে পারে’।
‘এ বিষয়ে আগে যে আলোচনা হয়েছিল, তা আবার শুরু করা যেতে পারে। কিন্তু এরপরও মৃতের স্বজনদের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। একটি নির্ভুল ও সঠিক ভোটার তালিকা সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার। কেননা, এটি একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ’।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৭
ইইউডি/এএসআর