এদের বেশিরভাগেরই শরীরের বিভিন্ন অংশে বোমার স্প্লিন্টার প্রবেশ করেছে। কয়েকজনের আবার শরীরের অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়েছে।
২২ বছরের মুশতাক আহমেদ কৃষিকাজ করেন। শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় শিববাড়ি এসেছিলেন বাজার করতে। বাজার শেষে বাড়ি ফেরার সময় বোমার বিস্ফোরণ হয়।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অন্ধকার ছিলো চারিদিক। অনেক মানুষ ছিলেন সেখানে। হঠাৎ বিকট আওয়াজ হয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। বিস্ফোরণে ডান পায়ের হাঁটুর নিচের মাংস ঝড়ে গিয়েছে তার।
একই বয়সী রাসেল হকারি করে কাপড় বিক্রি করেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২৯ নম্বর বেডে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তার চাচা খলিল বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যায় দোকান শেষে রাসেল শিববাড়ির ঘটনা দেখতে যান। সেখানে বোমার বিস্ফোরণে দুই পায়ে তিনটি স্প্লিন্টার প্রবেশ করেছে রাসেলের। দু’টি বের করা গেছে। আরেকটি বাকি আছে। সেটিও অপারেশন করে বের করা হবে।
পেশায় ফেরিওয়ালা বিপ্লব পাল (৪০)। মুড়ি, চিড়া ভাজা এ ধরনের খাবার ফেরি করেন তিনি। শনিবার বিকেলে শিববাড়িতে ভাতিজার বাড়ি বেড়াতে আসেন। সন্ধ্যার দিকে বের হয়ে মেইন রোডে গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। জঙ্গিদমনের অভিযান দেখতে অনেক উৎসুক জনতাই সেখানে ছিলেন। হঠাৎ বোমার বিকট আওয়াজ শুনতে পান এবং চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসে।
বোমার আঘাতে দুই পা ঝলসে গিয়েছে। বাংলানিউজকে বলেন, যন্ত্রণায় পা নাড়াতে পারছি না। মনে হচ্ছে জ্বলে যাচ্ছে শুধু। শনিবার রাতেই চিকিৎসক বলেছিলেন পায়ে স্প্রে করাতে। কিন্তু গতরাতে স্প্রে না থাকায় আজ সকালে করতে হয়েছে। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে।
একই ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন শিরিন মিয়া। কদমতলীর ড্রাইভার রেস্টুরেন্টে বেয়ারার কাজ করেন তিনি। বোমার আঘাতে তার বাম পায়ের দু’টি আঙ্গুল ইতোমধ্যে কেটে ফেলতে হয়েছে। আরেক পা থেকে মাংস থেঁতলে পড়ে গিয়েছে। সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
২৮ বছরের ভানু দাস পেশায় ভ্যান চালক। পাঠানবাড়িতে মাল পৌঁছে দিয়ে কদমতলী নিজের বাসায় ফিরছিলেন তিনি। শিববাড়িতে আসলে ভিড় দেখে উৎসাহ নিয়ে দেখতে যান। হঠাৎ বোমার বিস্ফোরণে পায়ে এসে পড়ে স্প্লিন্টার।
সিলেটের এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিববাড়ি ঘটনায় আহত সব রোগীকে বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহানা বাংলানিউজকে বলেন, সকলকেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যারা সুস্থ হয়ে ওঠেছেন এবং আঘাত কম ছিলো, তাদের অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। আবার অনেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর হয়েছেন।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) ভোরর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে অভিযান চালায় অাইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। এরপর থেকেই প্রথমে বাড়ি এবং পরে পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়। জঙ্গিদের আটক এবং জিম্মীদের মুক্ত করতে শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় অপারেশন টোয়ালাইটস। শনিবার সন্ধ্যায় দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে ২ পুলিশসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র্যাব সদস্যসহ ৩২ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৭
এমএন/ওএইচ/