রোববার (২৬ মার্চ) দিনগত রাত ১১টার দিকে নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে মনিরুলের মরদেহ। সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল ৯টায় নিজ বাড়িতে দ্বিতীয় নামাজে জানাজার পর তাকে চিরশায়িত করা হবে।
বিষয়টি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুজ জাহের ও মনিরুলের স্বজনরা।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকায় ওই জঙ্গি আস্তানায় শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ শুরু হওয়ার পর রাতে দু’দফা বিস্ফোরণে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন, আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র্যাব সদস্যসহ ৩২ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মনিরুল ও আদালত পুলিশের পরিদর্শক সুনামগঞ্জের চৌধুরী মো. আবু কায়সার দিপু।
মনিরুলের প্রাণহানিতে তার পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমেছে। মনিরুল ওই গ্রামের ডা. নুরুল ইসলামের ছেলে। তার মা ফিরোজা খাতুন ছেলে হারানোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। শোকের ছায়া নেমেছে যেন পুরো গ্রামে। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী যারা আসছেন সবার চোখে বিষাদের ছায়া। অনেকে নীরবে কাদঁছেন তাদের প্রিয় সোহেলের জন্য। মনিরুল ইসলামের ডাক নাম সোহেল।
১৮ মাস বয়সী একমাত্র শিশু সন্তান ফারাভীকে বুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে চিৎকার করে কান্না করছেন মনিরুলের স্ত্রী পারভীন আক্তার। আত্মীয়-স্বজনরা বহু চেষ্টা করেও তার কান্না থামাতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) মনিরুল ছোট ভাই শামীমের বিয়েতে এসেছিলেন স্ত্রী পারভীন ও একমাত্র সন্তান ফারাভীকে নিয়ে। শুক্রবার (২৪ মার্চ) বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পরপরই রাতে সিলেট থেকে জরুরি ফোন আসে। শনিবার সকালে ছুটে যান সেখানে। অভিযানে অংশ নেন বিকেল ৩টা থেকে। রাতে খবর আসে মনিরুল আর নেই। নিহত হয়েছেন জঙ্গিদের হামলায়।
প্রতিবেশী রাশেদ বাংলানিউজকে জানান, মনিরুল মিশুক ও সামাজিক ছিলেন বলে ছেলে-বুড়ো সবার খুব প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন।
স্থানীয়রা কয়েকজন বয়োজ্যোষ্ঠ ব্যাক্তি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ছেলে মনিরুল ছিল একজন সৎ, মেধাবী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তা। সে বিভিন্ন সময় ছুটিতে বাড়িতে এলে এলাকার ছেলে-বুড়ো সবার খোঁজ খবর নিতো। এলাকার অনেক সামাজিক কাজে সহযোগিতা করতো।
তার বড় ভাই সোহাগ বলেন, মনিরুল গত বৃহস্পতিবার আমাদের সেজো ভাই শামীমের বিয়ে উপলক্ষে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসে। শনিবার সকালে বাড়ি থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিকেলে কাজ যোগদান করে। আর রাতে আমরা তার মৃত্যুর খবর পাই।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ইলিয়াছ শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সকহর্মী মনিরুল ইসলামের এমন মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। রোববার বিকেলে তার মরদেহ সিলেট থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। রাতের মধ্যে পৌঁছে যাবে। সোমবার সকাল ৯টায় তার গ্রামের বাড়িতে যানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এইচএ/