ডিভাইডার ভাঙার অপকর্ম সংঘটিত করা ‘জেনভায়ো’ নামে ওষুধ কোম্পানির মালিক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে তারা।
মহাসড়কের ক্ষতি সাধন করা কোম্পানির মালিককে নিয়ে পুলিশের দায়সারা ভূমিকাও স্থানীয় জনমনে সৃষ্টি করেছে সন্দেহ-সংশয়ের।
তবে পুলিশের দাবি, শিগগির এ ওষুধ কোম্পানির মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি চিঠি ঢাকায় পাঠানো হবে। হাতের নাগালে পেলেই মালিক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আশরাফুল আলমের শ্বশুরালয় ময়মনসিংহে। তিনি থাকেন ঢাকায়। রাজধানীর বারিধারায় তার মালিকানাধীন জেনভায়ো ফার্মা লিমিটেডের কার্যালয়।
প্রায় দুই বছর আগে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই ত্রিশালের বাগান এলাকায় এ ওষুধ ফ্যাক্টরর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এ কোম্পানির মালামাল আনা-নেওয়ার সুবিধার জন্যই মহাসড়কের ১৫ ফুট ডিভাইডার তিনি ভেঙে ফেলেন। এ অপকর্মে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম তাকে সব ধরনের সহায়তা করেন বলে অভিযোগ।
পরবর্তীতে এ নিয়ে মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ত্রিশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
কিন্তু চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ওই ভাঙা ডিভাইডার দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করা কোম্পানিটির মাটি ভর্তি একটি ট্রাকের সঙ্গে সেনা সদস্যদের জিপের সংঘর্ষের ঘটনায় পুনরায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
সমালোচনা ঢাকতেই রাতারাতি সেখানে বাঁশের বেড়া দেন কোম্পানির লোকজন। এ নিয়ে দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ ‘ত্রিশালে সড়কের ডিভাইডার ভেঙেছে জেনভায়ো’, সেখানে বাঁশের বেড়া!’ শিরোনামে সরেজমিন সংবাদ প্রকাশের পর শুরু হয় তোলপাড়। এ প্রতিবেদন নজরে আসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের।
তিনি এ কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগকে (সওজ) নির্দেশ দেন।
তার কঠোর নির্দেশে চলতি মাসের মাঝামাঝি জেনভায়ো’র মালিক আশরাফুল আলমকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম।
এরপর মহাসড়কের এ পয়েন্টে ভেঙে ফেলা ডিভাইডার পুনঃস্থাপন করা হয়।
সূত্র মতে, ওই কোম্পানির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েই মূলত দায় এড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। একই সঙ্গে তারা প্রচার করছেন, মালিক দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আর এ কারণেই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, গত সপ্তাহেও ত্রিশালে এ ওষুধ ফ্যাক্টরির কার্যক্রম পরিদর্শনে এসেছিলেন মালিক আশরাফুল আলম।
সেদিন দীর্ঘসময় তিনি সেখানে অবস্থান করেন। মূলত সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে তার গোপনে ‘রফা’ হওয়ায় পুলিশ ‘চুপ’ রয়েছে এবং কোনো অ্যাকশনেও যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি প্রথমেই বলেন, কোম্পানির মালিক আশরাফুল আলম দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
এসময় তিনি বিদেশে নয় দেশেই রয়েছেন, এমন তথ্য জানালে ওসি বলেন, তার বাসা ঢাকার গুলশানে। এ কারণে গ্রেফতারি চিঠি ঢাকার গুলশানের বাসায় পাঠানো হবে।
সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে এ ওষুধ কোম্পানির মালিকের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করছে।
কোম্পানির জমির দখলবাজি নিয়ে নিরীহ জনসাধারণের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও পুলিশের ‘ম্যানেজ’ ভূমিকার কারণে তারা প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছেন না।
এমনকি বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে ভুক্তভোগীদের হয়রানির কাজেও পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডিভাইডার ভাঙার মামলায় অভিযুক্ত জেনভায়ো ওষুধ কোম্পানির মালিক আশরাফুল আলমের সঙ্গে পুলিশে সখ্যের বিষয়টি তার কথাতেই উঠে আসে।
মুঠোফোনে বাংলানিউজকে তিনি প্রশ্ন করেন, মামলার বিষয়ে আপনি কেন জানতে চাচ্ছেন? এ বিষয়টি পুলিশ দেখবে। আমি পারিবারিক অসুবিধায় রয়েছি। আর কোনো কথা বলবো না।
পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধন করা ওই ওষুধ কোম্পানির মালিকের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা অন্যদের বিরুদ্ধেও একটি মেসেজ। যেনো আর কেউ সরকারি সম্পদের ক্ষতি করার সাহস না পান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এমএএএম/এসএনএস