ঢাকা: পাকিস্তান আমলে নেওয়া ঋণের দায় বাংলাদেশ নেবে কিনা এ-নিয়ে তখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে খুব রশি টানাটানি চলছিল। বাংলাদেশ দায় নিতে চাইছিল না।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কারগিল সাহেব বাংলাদেশে এলেন। বঙ্গবন্ধু বৈঠকে স্পষ্ট করে বললেন, আমাদের দেশে যদি কোনো ঋণের সম্পদ থেকে থাকে, তাহলেই কেবল আমরা তার দায় নেব। বঙ্গবন্ধুর যুক্তির কাছে অবশেষে নতি স্বীকার করেন বিশ্বব্যাংকের এই কর্ণধার।
কারগিল সাহেব ফিরে গিয়ে চিঠি দিয়ে জানালেন, বাংলাদেশকে সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে। বকেয়া ঋণের বিষয়ে পরে আলোচনা করা যাবে।
বাংলানিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এভাবেই স্মৃতিচারণ করছিলেন ড. মসিউর রহমান।
তিনি বলছিলেন, কখনও আক্রোশবশত কাউকে কোনো শাস্তি দিতেন না বঙ্গবন্ধু। মানুষের কষ্টকে নিজের কষ্ট হিসেবেই দেখতেন। তার কাছে এসে সাহায্যপ্রার্থী কেউ সাহায্য না পেয়ে ফিরে গেছেন এমন নজির নেই। ছোটখাট বিয়ষ নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। আর যার যা দায়িত্ব তার উপর আস্থা রাখতেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি সব সচিবকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। তার পরিবারের লোকজন সম্পর্কে জানতেন। দেখা হলেই তাদের খোঁজখবর নিতেন। একারণে সচিবরা কোনো বিষয়ে মন্ত্রীকে বলতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর কাছে এসে মন খুলে বলতেন।
প্রশাসনিক দক্ষতার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর উত্তরসূরী শেখ হাসিনার মিল কেমন জানতে চাওয়া হলে ড.মসিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনেক গুণ তাঁর মধ্যে বিদ্যমান। বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় কেউ কেউ ভবিষ্যদ্ববাণী করেছিলেন, অনেক লোক না খেয়ে মারা যাবে। তখন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) খাদ্য সহায়তার আশ্বাস দেয়। তারা বলল, তোমরা স্টক থেকে খাদ্য বিতরণ করো। আমরা পরে পাঠাচ্ছি।
এ নিয়ে খাদ্য ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই আপদকালীন মজুদ (রিজার্ভ) থেকে খাদ্য না ছাড়ার পক্ষে মত দেয়। আলোচনায় বসে সব যুক্তি শুনলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বললেন, ‘দেখেন, মানুষ যদি খাবার না পেয়ে মারা যায় তাহলে এই খাবার পরে কাকে দেবেন? আর পরে তো খাদ্য সহায়তা পাওয়ার একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনাও রয়েছে!’
এখানে কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলেন না। সবাই তখন তাঁর সঙ্গে একমত হলেন। চাইলে এ রকম অনেক ঘটনার নজির দেওয়া যাবে।
তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘আপনিতো খালেদা জিয়ার সরকারের সময়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, অভিজ্ঞতা কেমন?
জবাবে ড.মসিউর রহমান বলেন, আমি তখন এনবিআর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলাম। ডিমের ওপর কর বসানো হবে। আমাকে বলা হলো, খাদ্য হিসেবে আসা ডিমের উপর পঁয়তাল্লিশ শতাংশ আমদানি কর বসাতে। আর বাচ্চা ফোটানোর জন্য যে ডিম আসবে তা হবে ট্যাক্সমুক্ত।
আমি অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে বললাম, এতে দুর্নীতি বেড়ে যাবে। কোনটি খাদ্য আর কোনটি বাচ্চা ফোটানোর জন্য ধরা কঠিন হবে। আর গাড়ি আমদানির ট্যাক্স ৪৫ শতাংশ। ডিম আর গাড়ির ট্যাক্স সমান হলে মানুষ হাসাহাসি করবে।
সাইফুর রহমান বললেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চায়, তাই এটা করতে হবে। পরে যা হয় হবে। ডিম আমদানির ওপর দশ শতাংশ ট্যাক্স বসানো হলো। যা মাত্র কয়েক মাস বলবৎ ছিল।
মসিউর রহমান স্কুলজীবন থেকেই ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারি। ১৯৫৭ সালে এসএসসিতে প্রথম গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এইচএসসিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬২ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক অর্জন করেন।
১৯৬৫ সালে সিএসপি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা, এনবিআর, পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইআরডিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় তাঁকে।
** জহুর ভাই গেলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেন বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এসআই/জেএম